দেশাত্মবোধ ও জাতীয় অগ্রগতি রচনা 400 শব্দে । Essay on patriotism and national progress

দেশাত্মবোধ ও জাতীয় অগ্রগতি রচনা

দেশাত্মবোধ ও জাতীয় অগ্রগতি রচনা
দেশাত্মবোধ ও জাতীয় অগ্রগতি রচনা

ভূমিকা

“হেথা একদিন বিরামবিহীন মহা-ওংকারধ্বনি, হৃদয়তন্ত্রে একের মন্ত্রে উঠেছিল রণরণি।”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভারতবর্ষ সেই দেশ যেখানে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত। ধর্ম-জাতি-ভাষার ভিন্নতা সত্ত্বেও সকলের মধ্যে দেশের প্রতি একটা হৃদয়ের টান বা একাত্মতা লক্ষ করা যায়। এই আন্তরিক আকর্ষণই হল দেশাত্মবোধ। ভারতের মধ্যে এমন একটা জাতীয়তাবোধ আছে, যা ভৌগোলিক সীমা ছাড়িয়ে এক জাতি, এক প্রাণ, একতার মন্ত্রে ভারতবাসীকে গেঁথে রেখেছে।

দেশাত্মবোধের স্বরূপ

দেশের প্রতি একাত্মতাই হল দেশাত্মবোধ। দেশাত্মবোধ হল ভারতবাসীর সনাতন সাধনা, ভারতের গর্ব, ভারতের অলংকার। ভারতবাসীর স্বদেশভূমির প্রতি টান বহু প্রাচীনকাল থেকেই পরিলক্ষিত। বিদেশি ঐতিহাসিকেরাও ভারতবাসীর দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবোধ যে অপরিসীম তা স্বীকার করেছেন। ভারতবর্ষের ২৯টি রাজ্যে বসবাসকারী ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির যে ধারা লক্ষ করা যায়, তাই হল জাতীয়তাবোধ বা দেশাত্মবোধ।

দেশাত্মবোধের অবনতি

যখন সামান্য কোনো স্বার্থগত কারণে এক ধর্মসম্প্রদায়ের সঙ্গে আর-এক ধর্মসম্প্রদায়ের, এক ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে অপর ভাষাভাষী মানুষের বা এক জাতির সঙ্গে অপর জাতির দ্বন্দু বা সংঘাত হয়, তখন দেশাত্মবোধের ভিত্তিভূমিতে আঘাত আসে। বর্তমানে ভারতবর্ষে দিকে দিকে বিচ্ছিন্নতাবাদের যে প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে তাতেই দেশাত্মবোধ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

দেশাত্মবোধ জাগরণ

দেশাত্মবোধ জাগরণের জন্য ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে। দেশের সাংস্কৃতিক বাতাবরণ সংহতিচেতনা, দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধ জাগরণের অনুকূল হওয়া বাঞ্ছনীয়। ভাষাবিরোধ, জলবণ্টন বা অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। সমস্ত দেশে এমন এক সাধারণ শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে, যা ছাত্রছাত্রীদের মনে দেশাত্মবোধ জাগাতে পারে। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথা ধরে বলা যায়-

“মাটিতো আগুনের মত হবেই
যদি তুমি ফসল ফলাতে না জানো, 
যদি তুমি বৃষ্টি আনার মন্ত্র ভুলে যাও 
তোমার স্বদেশ তাহলে মরুভূমি।”

জাতীয় অগ্রগতি

দেশাত্মবোধের সঙ্গে জাতীয় অগ্রগতির একটি সমানুপাতিক সম্পর্ক রয়েছে। যদি দেশের মানুষের হৃদয়ে দেশাত্মবোধ জেগে থাকে, তাহলে দেশের উন্নয়ন বা জাতীয় অগ্রগতি অবশ্যম্ভাবী। দেশাত্মবোধে উদ্দীপিত মানুষ দেশের নানা সমস্যাকে দূর করে বিশ্বের দরবারে দেশকে স্বমহিমায় তুলে ধরতে পারে। কৃষিনির্ভর এই ভারতে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হলেই কৃষি, শিক্ষা, বাসস্থান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া-সবক্ষেত্রেই দেশ এগিয়ে যাবে।

উপসংহার

দেশাত্মবোধ হল ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ। দেশে সমস্যা আছে, অনৈক্য আছে তবুও “ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা” বাণী অবলম্বন করে আমাদেরকে স্বদেশভূমির গৌরবে গৌরবান্বিত হতে হবে। সর্বোপরি দেশকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে হবে, ভালোবাসতে হবে দেশের মানুষকে, তবেই-

‘ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।’

Leave a Comment