দক্ষিণ ভারতের নদনদী সমূহের বর্ণনা দাও
দক্ষিণ ভারতের নদনদী সমূহের বর্ণনা দাও। |
দক্ষিণ ভারতের নদনদী সমূহ
দক্ষিণ ভারতের উপদ্বীপীয় অঞ্চলের নদীগুলিকে প্রবাহের দিক অনুসারে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় A পূর্ববাহিনী নদী ও B পশ্চিমবাহিনী নদী।
A পূর্ববাহিনী নদী
মহানদী (দৈর্ঘ্য 857 কিমি)
উৎস: ছত্তিশগড়ের সিহওয়া উচ্চভূমি।
গতিপথ: সিহওয়া উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে ছত্তিশগড় ও ওড়িশার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়েছে। কটকের কাছে এসে বিভিন্ন শাখায় (কুশভদ্রা, ভার্গবী, দয়ট, দেবী, কাটাজুড়ি প্রভৃতি) বিভক্ত হয়ে বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
উপনদী: শিবনাথ, ইব, মান্দ, হাসদো, জংক্, ওং প্রভৃতি।
মোহানা: বঙ্গোপসাগর।
গোদাবরী (দৈর্ঘ্য 1,465 কিমি)
উৎস: পশ্চিমঘাট পর্বতের ত্রিম্বক শৃঙ্গ।
গতিপথ: দক্ষিণ ভারতের বৃহত্তম ও দীর্ঘতম নদী গোদাবরী ত্রিম্বক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিমঘাট পর্বতের মধ্যে প্রায় 20 কিমি পথ গিরিখাত সৃষ্টি করে মহারাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে। নাসিকের কাছে সামান্য বেঁকে দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্য দিয়ে রাজমাহেন্দ্রীর কাছে এসে গৌতমী, বশিষ্ঠ, বৈনতেয় প্রভৃতি শাখায় বিভক্ত হয়েছে এবং বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়ে বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে। গোদাবরীকে ‘দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা’ বলা হয়।
উপনদী: মঞ্জিরা, পেনগঙ্গা, ওয়েনগঙ্গা, ওয়ার্ধা, ইন্দ্রাবতী, শাবরী, পূর্ণা প্রভৃতি।
মোহানা: বঙ্গোপসাগর।
কৃষ্ণা (দৈর্ঘ্য 1290 কিমি)
উৎস: পশ্চিমঘাট পর্বতের মহাবালেশ্বর শৃঙ্গ।
গতিপথ : মহাবালেশ্বর শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর কৃষ্ণা নদী মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিজয়ওয়াড়ার নিকট বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। মোহানার কাছে এসে নাগবতী, ভামসধারা প্রভৃতি শাখায় বিভক্ত হয়ে বঙ্গোপসাগরে বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে।
উপনদী : কয়না, ভীমা, তুঙ্গভদ্রা, বেদবতী, মুসি, মালপ্রভা, ঘাটপ্রভা, পঞ্চগঙ্গা, দুধগঙ্গা প্রভৃতি।
মোহানা: বঙ্গোপসাগর।
কাবেরী (দৈর্ঘ্য 805 কিমি)
উৎস: পশ্চিমঘাট পর্বতের ব্রহ্মগিরি শৃঙ্গ।
গতিপথ: উৎপত্তিলাভের পর কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে তিরুচিরাপল্লির কাছে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। উত্তর শাখাটি কোলেরুন ও দক্ষিণ শাখাটি কাবেরী নামে প্রবাহিত হয়ে নিম্ন অববাহিকায় আবার মিলিত হয়েছে এবং শ্রীরঙ্গম দ্বীপ গঠন করেছে। এরপর কোলেরুন নদী উত্তর-পূর্বমুখী হয়ে এবং কাবেরী নদী দক্ষিণমুখী হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ে বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে। কাবেরী নদীর গতিপথে বিখ্যাত শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়েছে।
উপনদী: হেমবতী, শ্রিমসা, ভবানী, কাব্বানী, লক্ষ্মণতীর্থ, সুবর্ণস্বতী প্রভৃতি।
মোহানা: বঙ্গোপসাগর।
B পশ্চিমবাহিনী নদী
নর্মদা: (দৈর্ঘ্য 1,310 কিমি)
উৎস: মহাকাল পর্বতের অমরকন্টক শৃঙ্গ।
গতিপথ: উৎপত্তির পর নর্মদা নদী বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যের ওপর দিয়ে বয়ে এসে ভারুচ-এর কাছে এই নদী খাম্বাত উপসাগরে পতিত হয়েছে। গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নর্মদা নদীর এবং উপনদীর সংখ্যা কম। ভোরঘাটের নিকট এই নদীর প্রবাহপথে বিখ্যাত ধুয়াধর জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়েছে। নর্মদা নদীর মোহানায় কোনো বদ্বীপ সৃষ্টি হয়নি।
উপনদী: হিরণ, বর্ণা, কোলার, শের, বানজের প্রভৃতি।
পতনস্থল: কাম্বে বা খাম্বাত উপসাগর।
তাপী বা তাপ্তী (দৈর্ঘ্য 730 কিমি)
উৎস: মধ্যপ্রদেশের মহাদেব পর্বতের মূলতাই উচ্চভূমি।
গতিপথ: মূলতাই উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের মধ্য দিয়ে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে সুরাটের কাছে খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে। সাতপুরা ও অজন্তা পাহাড়ের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তাপ্তী নদীর গতিপথ সহজ সরল এবং উপনদীর সংখ্যাও কম। এই নদীর মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি হয়নি।
উপনদী: পুনা, পাটকি, গির্না, বেতাল, অমরাবতী, পাঁঝরা প্রভৃতি।
পতনস্থল: কাম্বে বা খাম্বাত উপসাগর।
আরও পড়ুন – নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা