“তপন যেন কোথায় হারিয়ে যায় এইসব কথার মধ্যে।”- কোন্ কথার মধ্যে তপন হারিয়ে যায়? কথাগুলো শোনার পর তার কীরকম অনুভূতি হয়েছিল? |
আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের প্রথম প্রকাশিত গল্প নিয়ে ছোটোমাসি ও মেসোমশাই তপনদের বাড়িতে এলে বাড়িময় শোরগোল পড়ে যায়। ছাপার অক্ষরে তপনের লেখা গল্প পড়ার জন্য ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা সবার হাতে হাতে ঘোরে। সবাই তপনের গল্প পড়ে ‘ধন্যি ধন্যি’ করে। আর এরই মধ্যে ছোটো মেসোমশাই মৃদু হেসে বলেন- “একটু-আধটু ‘কারেকশান’ করতে হয়েছে অবশ্য।”
এই কারেকশানের কথাটা আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ‘এতক্ষণ যারা তপনের প্রতিভার প্রশংসা করছিল তারাও খানিকটা তাচ্ছিল্যভাব দেখায়। নতুন মেসোমশাইয়ের মহত্ত্বের কথাই সবার মুখে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে-অর্থাৎ, ছোটো মেসোমশাই নিজে গিয়ে লেখাটি না দিলে ‘সন্ধ্যাতারা’-র সম্পাদক গল্পটি পড়েও দেখত কিনা সন্দেহ। পরিবারের লোকদের এই সকল কথাবার্তার মধ্যে তপন কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
নিজের লেখা ছাপার অক্ষরে দেখে তপনের যে আনন্দ-আহ্লাদ হওয়ার কথা, তা নিমেষেই হারিয়ে যায়। বরং ছোটো মেসোমশাইয়ের কারেকশান করা গল্প পত্রিকায় প্রকাশ পাওয়ায় সে লজ্জা বোধ করে। মায়ের অনুরোধে সবার সামনে নিজের লেখা গল্পটি জোরে জোরে পড়তে গিয়ে তপন বেকুব বনে যায়। কারণ, তপন যে গল্পটি পড়ছে তার লাইনগুলি তার লেখা নয়, আগাগোড়া ছোটো মেসোমশাইয়ের কারেকশান করা। যদিও ‘ধন্যি ধন্যি’ রব ওঠে – তবু ছোটো মেসোর বদান্যতার কথা আরও একবার উঠে আসে। – এই ধরনের আলোচনায় তপন প্রচণ্ড দুঃখ পায়, নিজের লেখা গল্প আর কোনোদিন কারওর কাছে ছাপানোর জন্য দেবে না বলে মনে মনে সংকল্প করে।