টেনিস কোর্টের শপথ সম্পর্কে কী জানো |
অভিজাতদের চাপে এবং অর্থসংকট থেকে মুক্তিলাভের লক্ষ্যে ষোড়শ লুই স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন ডাকেন। ৫ মে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ভার্সাই নগরীতে ১৭৫ বছর পর লুপ্তপ্রায় জাতীয় সভা স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন বসে।
তৃতীয় সম্প্রদায়ের দাবি
৫ মে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন শুরু হলে তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা সকল সদস্যের একই কক্ষে বসা ও মাথাপিছু ভোটের দাবিতে সরব হন। কারণ, স্টেটস্ জেলারেলের মাথাপিছু ভোটাধিকার ছিল না। ছিল সম্প্রদায়গত ভোটাধিকার। অর্থাৎ যাজক = ১, অভিজাত = ১ এবং তৃতীয় সম্প্রদায় = ১; এই তিনটি ভোট ছিল। যাজক ও অভিজাতদের স্বার্থ একই থাকায় তাদের মিলিত ভোট হত (১ + ১) = ২ এবং সব সময় তৃতীয় সম্প্রদায় পরাজিত হত।
জাতীয় সভা ঘোষণা
রাজা তৃতীয় শ্রেণির দাবি মানতে অস্বীকৃত হলে ১৭ জুন তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতি নিজেদের সভাকেই জাতীর সভা বলে ঘোষণা করে। অতঃপর বিরক্ত হয়ে রাজা হঠাৎ অধিবেশন বন্ধ করে দেন (২০ জুন)।
টেনিস কোর্টের শপথ
সভাগৃহ বন্ধ দেখে তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা আন্দোলনমুখী হয়ে ওঠেন। ২০ জুন মিরাব্যু ও অ্যাবে সিয়েসের নেতৃত্বে পার্শ্ববর্তী টেনিস খেলার মাঠে একটি অর্ধনির্মিত গৃহে সমবেত হয়ে বেইলির সভাপতিত্বে শপথ নেন যে, যতদিন না ফ্রান্সের জন্য একটি কার্যকরী সংবিধান তৈরি হচ্ছে, ততদিন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ চালিয়ে যাবেন। এই ঘটনাই ‘টেনিস কোর্টের শপথ’ নামে খ্যাত।
রাজার পদক্ষেপ
আন্দোলনের চাপে ২৩ জুন এক ঘোষণাপত্র জারি করে ষোড়শ লুই সাংবিধানিক ব্যবস্থা, নাগরিক স্বাধীনতা, জাতীয় ঐক্যে রাজা ও জনতার যৌথ অধিকার ইত্যাদি মেনে নেন। অবশ্য মাথাপিছু ভোটাধিকার বা যৌথ কক্ষে অধিবেশনের দাবি অস্বীকার করেন।
পরিণতি
এই সময় যাজকদের ১৩৯ জন এবং অভিজাত সম্প্রদায়ের ৪৭ জন প্রতিনিধি তৃতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগ দিলে গোটা পরিস্থিতি রাজার বিরুদ্ধে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত ভীত ও হতাশাগ্রস্ত রাজা ষোড়শ লুই নতিস্বীকার করেন এবং ২৭ জুন এক ঘোষণা দ্বারা তিন সম্প্রদায়ের একত্রে অধিবেশন ও মাথাপিছু ভোটের দাবি মেনে নেন। (এই ঘটনা ‘বুর্জোয়া বিপ্লব’ নামে পরিচিত)।
গুরুত্ব
টেনিস কোর্টের শপথ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই ঘটনাটি ছিল প্রথম প্রত্যক্ষ রাজবিরোধিতার নিদর্শন। এই বিরোধিতায় তৃতীয় শ্রেণি জয়যুক্ত হয় এবং এই সময় থেকেই বিপ্লবের নিয়ন্ত্রণ কার্যত তৃতীয় শ্রেণির অন্তর্গত বুর্জোয়াদের হাতে চলে যায়।