টীকা লেখা উপদ্বীপের যুদ্ধ
|
১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে পোর্তুগাল ও স্পেনে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যে গণ অভ্যুত্থান দেখা দেয়, এটি উপদ্বীপের যুদ্ধ নামে পরিচিত। ব্রিটিশ সমর্থন পুষ্ট স্পেন ও পোর্তুগাল উপদ্বীপের যুদ্ধে নেপোলিয়নকে পরাজিত করে।
উপদ্বীপের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
উপদ্বীপের যুদ্ধের উৎস ছিল পোর্তুগাল। পোর্তুগাল মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করলে নেপোলিয়ন ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের মধ্য দিয়ে সৈন্য পরিচালনা করে পোর্তুগাল দখল করেন এবং প্রত্যাবর্তনের পথে তিনি মিত্র দেশ স্পেন দখল করে নেন। জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ স্পেনবাসী নেপোলিয়নের বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পোর্তুগাল ও ইংল্যান্ড স্পেনের সাহায্যে এগিয়ে আসে। শুরু হয় উপদ্বীপের যুদ্ধ। বহু চেষ্টা করেও নেপোলিয়ন এই যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেন নি।
উপদ্বীপের যুদ্ধ
স্পেনবাসীরা বৈদেশিক শাসনকে সহ্য করতে রাজি ছিল না। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে স্পেনের কৃষক থেকে যাজক ও সামন্তরা ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম চালায়। স্পেনের ধর্মভীরু ও শিক্ষিত কৃষকরা দেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ শুরু করে। বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠে বিদ্রোহী প্রতিরোধ সমিতি বা ‘জুন্টা’। ১৮০৮ খ্রি. বেলেনের যুদ্ধে স্পেনীয়রা ফরাসি বাহিনীকে পরাজিত করে এবং ফরাসি সেনাপতি দুপ আত্মসমর্পণ করেন। এই সংবাদে নেপোলিয়ন স্পেনে আসেন। ইতিমধ্যে ইংল্যান্ড ফরাসি বাহিনীর বিরুদ্ধে স্পেনের পক্ষ অবলম্বন করে। অবশেষে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ভিত্তোরিয়ার যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাপতি আর্থার ওয়েলেসলি ফরাসি বাহিনীকে বিধ্বস্ত করে এবং স্পেন ফরাসি বাহিনী মুক্ত হয়।
উপদ্বীপের যুদ্ধের তাৎপর্য
ঐতিহাসিক রুশদের ভাষায় এটি ছিল একটি মারাত্মক ভ্রান্তি (It was a serious miscalculation)। এই যুদ্ধে ফ্রান্সের বিপর্যয় প্রমাণ করলো যে নেপোলিয়ন অপরাজেয় নন। উপদ্বীপের যুদ্ধ থেকেই নেপোলিয়নের পতনের সূত্রপাত হয়েছিল। নেপোলিয়ন নিজেই তাঁর পরাজয়কে ‘দুষ্টক্ষত’ (Spanish ulcer) বলেছেন।