ছাত্র সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা – আজকের পর্বে ছাত্র সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা নিয়ে আলোচনা করা হল।
ছাত্র সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা
ছাত্র সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা
|
ভূমিকা
উষার দুয়ারে আঘাত হেনে একমাত্র ছাত্ররাই পারে সমাজজীবনে নতুন প্রভাতের আগমনকে সত্য করে তুলতে। অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী ছাত্ররাই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অগ্রসর হতে পারে। তাদের হৃদয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী সাহস সমাজকল্যাণে তাদের অনুপ্রেরণা দেয়। অফুরান জীবনীশক্তি নিয়ে দেশের পিছিয়ে পড়া দীনদুঃখীদের সেবায় তারা নিজেদের নিয়োজিত করে। সমাজসেবার মধ্য দিয়ে ছাত্ররা জীবনের সঠিক লক্ষ্য খুঁজে পায়।
ছাত্রদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা
ছাত্রদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা, ‘ছাত্রানাম্ অধ্যয়নং তপঃ’। বর্তমানে অভিভাবকদের কামনা তাঁদের সন্তান পড়াশোনার ইঁদুর-দৌড়ে যেনতেনপ্রকারেণ এগিয়ে থাকুক। কেরিয়ার তৈরির বাইরে আর তাদের কিছু বিবেচ্য বা করণীয় নেই। জীবনে শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়াই আসল ব্যাপার-এই প্রচলিত ধ্যানধারণার বশবর্তী হয়ে ছাত্রসমাজ হয়ে পড়ছে আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর। তারা যুগের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বিচ্যুত হচ্ছে শিক্ষার মহত্তর সার্থকতা থেকে-পরিপূর্ণ মানুষ হওয়া থেকে।
ছাত্রদের স্বভাববৈশিষ্ট্য
‘উপনিষদ’-এ বলা হয়েছে, ‘তস্মাদুচ্চরতো শ্রেয়াণ চরৈবেতি, চরৈবেতি।’ চরৈবেতির মন্ত্রে দীক্ষিত ছাত্রেরা স্বভাবে বন্ধনহীন। সবল পদাঘাতে তারা কুসংস্কার ও কুপ্রথার জগদ্দল পাথরকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে পারে। শুষ্ক, অর্থহীন আচার-অনুষ্ঠানের বাহুল্য সমাজের গতিকে রুদ্ধ করে দিলে ছাত্রদলই পারে নবীন প্রাণস্পর্শে সমাজকে আবার গতিময় করে তুলতে। যে সমাজে তারা বড়ো হয়েছে, সেই সমাজকে বিনিময়ে তারা কিছু দিতে চায়। ছাত্রদের দুর্বার প্রাণশক্তিকে যদি সমাজগঠনের কাজে লাগানো যায়, তাহলে দেশ-জাতি নানাভাবে উপকৃত হবে।
সামাজিক দায়িত্ব
ছাত্রসমাজের প্রধান দায়িত্ব অশিক্ষা ও নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে লড়াই। শিক্ষার অভাবে নিরক্ষর মানুষের জীবন দিশাহীন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সাক্ষরতার বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে চোখ থাকতেও যারা অন্ধ তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতায় নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ে তারা বলবে, ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক।’ সমাজকে পদে পদে যে জীর্ণলোকাচার গ্রাস করে ফেলেছে, তার বিরুদ্ধে একমাত্র ছাত্রদলই ঝড় তুলতে পারে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশে যে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের জন্ম হয় তার পাদমূলে একমাত্র ছাত্রদলই কুঠারাঘাত করতে পারে। সাম্প্রদায়িকতার বীজকে সমূলে উৎপাটন করার ব্রত তাদের গ্রহণ করতে হবে। গণতন্ত্রের মোড়কে ধনতন্ত্রের আসল রূপ দেশবাসীর সামনে তারা খুলে দেবে। অন্যায়, অবিচার, অসামাজিকতা, অশ্লীলতার বিরুদ্ধে লড়াই সংঘটিত করাও ছাত্রসমাজের দায়িত্ব। প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ না দিয়েও দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করা যেতে পারে। আর্ত-পীড়িতের সেবায় নিজেদের নিবেদিত করতে হবে। সমাজের বুকে তারাই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
উপসংহার
বর্তমান ভারতের সমস্যা নানাবিধ। প্রাচীনত্ব থেকে আধুনিকতায় উত্তরণমূলক এই যুগসন্ধিক্ষণে ছাত্রদের ভূমিকাই প্রধান। অধ্যয়নের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার ব্যাপারেও তাদের সচেতন থাকতে হবে।