ছাত্রজীবনে চলচ্চিত্রের প্রভাব

ছাত্রজীবনে চলচ্চিত্রের প্রভাব
ছাত্রজীবনে চলচ্চিত্রের প্রভাব

ভূমিকা

আধুনিক প্রযুক্তির বিস্ময় চলচ্চিত্র হল শিল্পমাধ্যমগুলির মধ্যে কনিষ্ঠতম ও সবথেকে শক্তিশালী গণমাধ্যম। বলা যায়, চিত্র, সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য-সব কিছুরই সমন্বয় ঘটেছে চলচ্চিত্রে। উপরন্তু চূড়ান্তরূপে বাস্তবধর্মী হওয়ার কারণে সিনেমার আকর্ষণ ও আবেদন – তুলনাহীন। জনসাধারণ বা বিশেষত ছাত্রছাত্রীদের উপর এর প্রভাব গভীর ও সুদূরপ্রসারী।

ছাত্রসমাজের উপর চলচ্চিত্রের সুপ্রভাব

চলচ্চিত্রের দর্শকদের মধ্যে এক সিংহভাগ হল ছাত্রসমাজ। মোবাইল, ল্যাপটপ, ইনটারনেটের দৌলতে আধুনিক জীবনযাপনে চলচ্চিত্র এখন হাতের মুঠোয়। চলচ্চিত্রের আবেদন এমনিতেই দর্শকের মন ও মননের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে, তাদের বয়সোচিত সংবেদনশীলতার কারণে, সেই প্রভাব হয় আরও জোরালো। তাদের আত্মিক ও চারিত্রিক গঠনের ব্যাপারে চলচ্চিত্রের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। বিদ্যালয় স্তরে আমোদ-প্রমোদের কর্মসূচির অন্তর্গত চলচ্চিত্র প্রদর্শনের যে ব্যবস্থা করা হয়, তার অন্যতম উদ্দেশ্য ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নানাবিধ মানবিক গুণাবলির উন্মেষ ঘটানো, শুভ চেতনার বিকাশসাধন। প্রচারমূলক চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্রের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রয়োজনীয় সামাজিক সচেতনতা, নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক ধ্যানধারণা, বিশেষ কোনো অভিযানের প্রতি আগ্রহ-উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলা অনেক সহজ ও সফল প্রতিপন্ন হয়। দেশপ্রেমের ভাবনায় ছাত্রাছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করতে চলচ্চিত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সমাজ ও সংসারে নারীর অধিকার, ব্যক্তিজীবনে পরিবারের গুরুত্ব, প্রবীণ মানুষদের প্রতি নবীন প্রজন্মের দায়দায়িত্ব এবং তা ছাড়াও বিভিন্ন সমাজমূলক সমস্যা, কুপ্রথা, কুসংস্কার-এইসব বিষয়ই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যথাযথভাবে তুলে ধরা হলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তা অনেক বেশি কার্যকরী প্রভাব ফেলে। সন্ত্রাসবাদ, এইডস, বিশ্ব উন্নায়ন, মাদকাসক্তি, বর্ণবৈষম্য প্রভৃতি বিশ্বব্যাপী সমস্যাগুলির ব্যাপারেও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে চলচ্চিত্র কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। জীবনের লক্ষ্য স্থির করার প্রশস্ত সময় ছাত্রাবস্থা এবং এ ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করার এক আদর্শ উপায় চলচ্চিত্র। সব মিলিয়ে ছাত্রসমাজের উপর চলচ্চিত্রের ভালো প্রভাবের কোনো সীমা নেই।

ছাত্রসমাজের উপর চলচ্চিত্রের কুপ্রভাব

চলচ্চিত্র ছাত্রসমাজের উপর প্রচুর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করলেও অবশ্যই রয়েছে কিছু নেতিবাচক প্রভাবও। মারদাঙ্গা, হিংসা, অশ্লীলতা প্রভৃতির বেপরোয়া, চিত্তাকর্ষক প্রদর্শন অনেকসময় ছাত্রছাত্রীদের সংবেদনশীল মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ধূমপান, মদ্যপান, মাদকসেবন ইত্যাদি নানান কুঅভ্যাসের মূলে বহুক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের প্রভাব থাকে। চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত বহু নির্বোধ চটকদার কেরামতির অন্ধ অনুকরণের চেষ্টা ছাত্রছাত্রীদের জীবনে অনেকসময়েই বিপদ-আপদ ডেকে আনে। আদতে চলচ্চিত্র দেখার মাত্রাতিরিক্ত অভ্যাসও ছাত্রজীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

উপসংহার

আধুনিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ চলচ্চিত্র। স্বদেশ-সহ সমগ্র বিশ্বের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক রূপরেখার সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে চলচ্চিত্রের জুড়ি মেলা ভার। প্রত্যেক দেশের ছাত্রসমাজ সে দেশের ভবিষ্যতের রূপকার। এই গুরু দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার লক্ষ্যে তাদের হতে হবে ওয়াকিবহাল, সচেতন, সুনাগরিক। আর এ ব্যাপারে অন্যতম গরত্বপূর্ণ ভূমিকা অবশ্যই নিতে পারে চলচ্চিত্র।

Leave a Comment