খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ প্রবন্ধ রচনা

খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ প্রবন্ধ রচনা
খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

“দুর্বল মস্তিষ্ক কিছু করিতে পারে না। আমাদিগকে উহা বদলাইয়া সবল মস্তিষ্ক হইতে হইবে। তোমরা সবল হও, গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের সমীপবর্তী হইবে।”
-স্বামী বিবেকানন্দ

শরীর ও মনের যৌথ কল্যাণপ্রসূ প্রচেষ্টাই আগামীর সুখসমৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি। সুঠাম-সবল দেহই হয়ে ওঠে সমৃদ্ধিশালী-ললাট-দেশে এঁকে দেয় সাফল্যের জয়তিলক। তাই ‘চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু, সাহস বিস্তৃত বক্ষপট।’ আর এই দেহ ও মনের পুষ্টিসাধনের অন্যতম উৎস খেলাধুলা। খেলাধুলাতেই নিহিত জীবন বিকাশের উন্মুক্ত বিশালতা, জীবনসংগ্রামের দুর্জয় মনোভাব; বিজয়ের উচ্ছ্বাস আবার পরাজয়ের গ্লানি অতিক্রমে উত্তরণের প্রয়াস। মানবসভ্যতার ক্রমবিবর্তনের অপরিহার্য দলিল এই খেলাধুলা।

খেলাধুলায় শরীরচর্চার উপযোগিতা

ক্রীড়া-রণক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মূলে থাকে ক্রীড়াবিদের দুর্জয় ক্ষমতা, দুর্বার মনোবল-যা গড়ে তুলতে প্রয়োজন নিয়মিত শরীরচর্চা, ব্যায়াম, অঙ্গসঞ্চালন। আর বাল্য বা কৈশোরই শরীর গঠনের প্রকৃষ্ট সময়। সুস্থ শরীরে বিরাজ করে সুস্থ মন, অফুরন্ত প্রাণশক্তি। যা মানুষকে কর্মে প্রবৃত্ত হয়ে কর্মসাফল্যকে করায়ত্ত করার দুর্বার মনোবল জোগায়।

খেলাধুলা ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ

প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূত্রে হলেও ক্রীড়া প্রাঙ্গণে ব্যবধান মুছে সমগ্র বিশ্বপ্রীতির বন্ধনে বাঁধা পড়েছে। বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ জাগরণের প্রধান উৎস খেলাধুলা। বিশ্বমানবতাবোধ উন্মেষের প্রত্যক্ষ আনন্দ-আসর। জয়পরাজয়ের অঙ্ক-হিসাব নয়, প্রতিযোগিতার আন্তরিকতায়, উন্নতমানের ক্রীড়াকৌশলে, হাজার হাজার মানুষের মন জয় করে নেয় খেলোয়াড়রা। দেশের মাটিতে বিদেশের পাদস্পর্শে মানুষ সঞ্চয় করে ভ্রাতৃত্ববোধের মহৎ অভিজ্ঞতা, মনুষ্যত্বের দুর্লভ ঐশ্বর্য, যা সঞ্চারিত হয় ছাত্রজীবনে।

শৃঙ্খলাবোধের জাগরণ

কোনো একক ব্যক্তি মাত্র নয়, দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতিসাধনের মুখ্য শর্তই হল শৃঙ্খলাবোধ। ক্রীড়াক্ষেত্রই হল সেই শৃঙ্খলাবোধের উৎসকেন্দ্র, যা ব্যক্তিচরিত্র গঠনে সহায়ক হয়ে ওঠে। ব্যষ্টিকে একাত্ম করে সমষ্টিতে। দলগত ঐক্যবদ্ধ একটা জাতি, একটা দেশকে ঐক্যবদ্ধ হতে সহায়তা করে।

চরিত্রগঠনে সহায়ক

ক্রীড়াক্ষেত্রের সংযম-শাসনেই জীবনে আসে শৃঙ্খলাবোধ, সামঞ্জস্যবিধানের মানসিকতা। খেলা মানুষকে শিষ্টাচারে দীক্ষিত করে। তাকে চারিত্রিকভাবে সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ করে গড়ে তোলে। তাকে করে তোলে একাগ্র, সহিমু, মহানুভব। ক্রীড়াঙ্গনের অনাবিল আনন্দ-উৎস, পরাজয়ের সহনশীলতা মানুষকে প্রভাবিত করে। তাই বলা যায়, ক্রীড়ক্ষেত্র মানুষের চরিত্রগঠনের সোপানস্বরূপ।

খেলাধুলা ও শিক্ষা

শিক্ষা শ্রেণি উত্তরণের সার্কাস মাত্র নয়, নয় জীবিকা অর্জনের নিছক শর্তস্বরূপ। শিক্ষা সমগ্র জাতির অগ্রগতির ভিত্তি, মানুষের প্রতিভা উন্মোচনের প্রেরণা। দেহ-মনের সুশৃঙ্খল সামঞ্জস্যবিধানেই অর্জিত হয় যথার্থ শিক্ষা। খেলাধুলার আনন্দস্পর্শে দেহ-মন হয়ে ওঠে সজীব, প্রাণময়। তাই বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে খেলাধুলার নিবিড় যোগ। নিত্যদিনের রোজনামচায় জীবনের একঘেয়েমিকে উন্মুক্ত ক্রীড়াক্ষেত্র সতেজ করে তোলে। শিক্ষার প্রতি একাগ্র, একনিষ্ঠ করে তুলতে শিক্ষাক্ষেত্রে খেলাধুলার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

উপসংহার

খেলাধুলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব মানুষকে শেখায় যুদ্ধজয়ের কৌশল। দেয় সহিমুতার দীক্ষা, সংকীর্ণ হৃদয়বৃত্তিকে মহত্ত্বে উন্নীত করে। সফলতা-ব্যর্থতায় গড়ে তোলে সুশৃঙ্খল জীবনবোধ। একজন সফল ক্রীড়াবিদ একজন দেশনায়কের সম্মানে ভূষিত হয়। জাতির গৌরব সূচিত করে। খেলার ময়দান এক অনন্ত সাধনার পীঠস্থানস্থরপ। খেলাধুলাই শেখায় কণ্টকাকীর্ণ এই জীবনপথের আগলগুলোকে প্রতিপদে বিজিত করে জয়মাল্যের গৌরব অর্জন করতে। বর্তমানে যে ক্রুর রাজনীতি ক্রীড়াক্ষেত্রকে প্রতিমুহূর্তে কলুষিত করে চলেছে, সেই সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশকে খেলাধুলার মুক্ত অঙ্গনে নবজাগ্রত চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তবেই এই দেশ ফিরে পাবে তার হৃতগৌরব, মান, মর্যাদা।

Leave a Comment