খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা
খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা
|
ভূমিকা
শরীর এবং মনের মেলবন্ধনেই গড়ে ওঠে সুস্থ জীবন। সেই জীবনের সামগ্রিক পরিপুষ্টিদানে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে খেলাধুলা। এই খেলাধুলা প্রাথমিকভাবে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির একটি দিক। কিন্তু সেই প্রবৃত্তিকে ছাপিয়ে তা আবার হয়ে উঠতে পারে স্বাস্থ্য গঠন, চরিত্র গঠন, মানসিক বিকাশ, শিক্ষার মাধ্যম এবং চিত্র বিনোদনের উপকরণও।
শরীর ও স্বাস্থ্য গঠন
আদিমকাল থেকে সহজাত প্রবৃত্তির বসে বন্য পশুপাখির মতো মানুষও খেলাকে তাদের সঙ্গী করে নিয়েছিল। সভ্যতার বিকাশের তালে তাল রেখে খেলার ধরন পালটালেও মানুষ তাদের প্রবৃত্তি পালটায়নি। তারা আজও খেলতে চায়, খেলেও। সেই খেলা নানা ধরনের হতে পারে। যেমন- ফুটবল, ক্রিকেট, কুস্তি, বক্সিং, দৌড়, সাঁতার, ঘোড়দৌড়, টেনিস, খো খো, কবাডি ইত্যাদি। এসব খেলার ভিতর দিয়ে খেলোয়াড়দের শরীরচর্চা হয়, ব্যায়ামের মতো ফল মেলে। স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে সুস্বাস্থ্য গঠনের সহায়ক। স্বামী বিবেকানন্দ ভারতীয় যুবকদের প্রতি আহবান জানিয়ে লিখেছিলেন- ‘Iron nerves with a well-intelligent brain and the whole world is at your feet.’ কথাটি এখনকার খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
চারিত্রিক বিকাশ
শরীর ও স্বাস্থ্য গঠনের মতো চরিত্র গঠন বা চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশের ক্ষেত্রেও খেলাধুলার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় যেসব খেলায় একাধিক খেলোয়াড়ের প্রয়োজন হয়, সেসব খেলার ক্ষেত্রে দেশের নানান স্থান থেকে নানান ধর্মের খেলোয়াড়রা সঙ্গবদ্ধ ও বন্ধুত্বপূর্ণভাবে শৃঙ্খলা বজায় রেখে অংশ গ্রহণ করে। তার ফলে তাদের মধ্যে জাতপাতের গোঁড়ামি ঘুচে যায়। তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে জাতীয় ঐক্যবোধ, গড়ে ওঠে একাগ্রতা, শৃঙ্খলাবোধ বা নিয়মানুবর্তিতাও, যা ওইসব খেলোয়াড়দের পরবর্তী জীবনে সহায়ক হয়ে ওঠে।
মানসিক বিকাশ
শরীরের সঙ্গে মনের একটি বিশেষ যোগ রয়েছে। সেই কারণে বলা হয়- ‘Sound body and sound mind are keys to all successes’, খেলাধুলার মাধ্যমে শরীর সুস্থ সবল হয়ে উঠলে মনও প্রফুল্ল হয়। তা ছাড়া একসঙ্গে খেলতে গিয়ে পারস্পরিক আদানপ্রদান করতে হয়, প্রতিযোগিতাও চলে। কোনো একজনের নেতৃত্বে খেলতে হয় বলে পরবর্তী জীবনে নেতৃত্বদানের মানসিকতা যেমন গড়ে ওঠে, তেমনি গড়ে ওঠে প্রতিযোগিতার মনোভাব, উদারতা, হার না মানার মানসিকতাও।
চিত্ত বিনোদন
খেলাধুলা শুধু শরীর-স্বাস্থ্য-চরিত্র গঠন এবং মানসিক বিকাশই ঘটায় না, মানুষের চিত্ত বিনোদনেরও সহায়ক হয়ে ওঠে। সেই কারণে খেলোয়াড়রা যেমন খেলার ভিতর দিয়ে আনন্দ উপভোগ করে, মেতে ওঠে বিনোদনে; সেই খেলা যারা দেখে, সেসব দর্শকদের মধ্যেও খেলাধুলা হয়ে ওঠে চিত্ত বিনোদনের উপকরণ। দর্শকদের মধ্যে সেক্ষেত্রে কিছু চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশও ঘটে।
শিক্ষার মাধ্যম
খেলাধুলার সঙ্গে শিক্ষারও বিশেষ যোগ রয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা শুধু পড়েই যাবে, তা কখনও হতে পারে না। জীবনে দুটোরই সমান প্রয়োজন। তা না হলে পড়তে পড়তে ছাত্রছাত্রীদের মন একসময় বিদ্রোহী হয়ে বলতেই পারে-
তবে বিদগ্ধজনের পরামর্শ হল-Play while you play, read while you read.’ খেলাধুলোর গুরুত্বের কথা ভেবে তাই তাকে শিক্ষাসূচিরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
উপসংহার
মানুষের এই চাওয়ার অনেকটাই মেটাতে পারে খেলাধুলা। আধুনিককালে যার সূচনা হতে পারে ছাত্রজীবন থেকেই।
আরও পড়ুন – ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ও প্রভাব আলোচনা করো