কুসংস্কার ও বিজ্ঞানচেতনা রচনা/বিজ্ঞান ও কুসংস্কার/কুসংস্কার দূরীকরণে বিজ্ঞানের অবদান
কুসংস্কার ও বিজ্ঞানচেতনা রচনা/বিজ্ঞান ও কুসংস্কার/কুসংস্কার দূরীকরণে বিজ্ঞানের অবদান |
ভূমিকা
মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। সে তার বুদ্ধির জটাবন্ধন খুলে এই বিশ্বে তার উপযুক্ত স্থান দখলে সমর্থ হয়েছে-“Man has won his dominant position on this earth.”। কিন্তু বুদ্ধির জটাবন্ধন এখনও কোথাও কোথাও পাকিয়ে রয়েছে। তাইতো মানুষ আজও বিশ্বাস করে চলে নানান কুসংস্কার।
বিজ্ঞান কী
“Science is the way to take the matter with judgement.” (J.B. Shaw)। অর্থাৎ, বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে কোনো কিছু মেনে নেওয়ার নাম হল বিজ্ঞান। বিজ্ঞান প্রত্যক্ষ প্রমাণের ওপর নির্ভরশীল।
কাকে বলে কুসংস্কার
“Superstition is the backward going of human life.” (J.C. Bose) অর্থাৎ, কুসংস্কার হল মানবজীবনের সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়, যা মানুষকে কেবলমাত্র পশ্চাৎমুখী করে। সভ্যতার অগ্রগতি নয়, সভ্যতার পশ্চাদ্গমন হল কুসংস্কার।
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার
মানুষ আজ বিজ্ঞানের রথে চড়ে মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছে, কৃত্রিম উপগ্রহের সফল উৎক্ষেপণ করছে, নব-নব আবিষ্কারে সে মেতে উঠেছে। গোটা বিশ্বকেই সে বশ মানিয়েছে। একই সঙ্গে মানবজীবনের অঙ্গ হিসেবে রয়ে গিয়েছে কিছু কুসংস্কার। এমনকি বিজ্ঞান নির্ভর মানুষের মধ্যেও কুসংস্কার বাসা বেঁধেছে। যেমন-এক শালিক দেখে দিন খারাপ যাওয়া, বিড়ালের পথ ডিঙানোতে বিপদের আশঙ্কা, একচোখ না দেখা ইত্যাদি।
বর্তমান যুগে কুসংস্কার
শুধু অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে নয়, অনেক শিক্ষিত লোকও পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে পরীক্ষা খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় ডিম, কলা খান না। খেলোয়াড়রা বিশেষ কোনো পোশাক বা জুতো পরে খেলতে নামেন সাফল্য পাওয়ার আশায়, শিক্ষিত সমাজের অনেকেই যাত্রা করার সময় কেউ পিছন থেকে ডাকলে কিংবা হাঁচি দিলে কিছু সময় অপেক্ষা করে তারপর যান, যতই যাওয়ার তাড়া থাকুক না কেন। এমনই অজস্র কুসংস্কার মেনে চলে বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশ মানুষ, যারা নিজেদের আধুনিকমনস্ক শিক্ষিত বলে মনে করেন।
ভারতবর্ষে কুসংস্কারের রূপ
কিছু বছর আগে সারা ভারতবর্ষব্যাপী গণেশকে দুধ খাওয়ানোর গুজবে চলল গ্যালন গ্যালন দুধের অপচয়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ-পুলিশ, রাজনীতিবিদ, ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষক, বিচারক সকলে এতে শামিল হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে প্রকাশ করলে বিশ্বের দরবারে ভারতের মাথা নীচু হয়ে যায়।
কুসংস্কার দূরীকরণের উপায়
কুসংস্কারের শিকড় এত দৃঢ়ভাবে গেঁথে রয়েছে যে সামান্য উদ্যোগ গ্রহণ যথেষ্ট নয়, প্রত্যেক সচেতন নাগরিককে কুসংস্কার দূরীকরণে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পন্থাগুলি হল- ১। সর্বপ্রথম শিক্ষার প্রসার বাড়ানো দরকার। অশিক্ষার অন্ধকার দূর হলে কুসংস্কার পালানোর পথ পাবে না। ২। পথ নাটিকা, ম্যাজিক, লোকসংগীতের মাধ্যমে গ্রামে-গঞ্জে প্রচার চালাতে হবে। ৩। দেয়াল লিখন, হোর্ডিং, ব্যানারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে। সরকারি উদ্যোগে রেডিয়ো ও টিভিতে নানা সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন দেখানো যেতে পারে। ৪। কোথাও কোনো কুসংস্কারমুখী ঘটনা ঘটলে তৎক্ষণাৎ বিজ্ঞানমঞ্চের প্রতিনিধিদের সেখানে উপস্থিত হয়ে মানুষের ভুল ধারণা দূর করতে হবে। ৫। প্রতিটি যুক্তিবাদী মানুষ যদি অন্যকে বোঝাতে সচেষ্ট হন তাহলে কোনো বাধাই বাধা হিসেবে গণ্য হবে না।
কুসংস্কার দূরীকরণে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা
ছাত্রছাত্রীরা প্রত্যেকে নিজ নিজ পাঠ্যসূচিতে বিজ্ঞান পাঠের মধ্য দিয়ে নিজেরা যুক্তিবাদী হবে। নানা বিজ্ঞান প্রদর্শনী, পথ নাটিকা, গ্রাম্য সভার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা গ্রামীণ অশিক্ষিত মানুষকে সচেতন করতে পারে।