কালি কলমের প্রতি ভালোবাসা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো। |
লেখক শ্রীপান্থ এমন সময়ে জন্মেছিলেন যে কলমের বিবর্তনের বেশ কয়েকটি পর্যায় তাঁর প্রত্যক্ষ করার সুযোগ ঘটেছিল। শৈশবে তাঁর লেখালিখি শুরু হয়েছিল কঞ্চির কলম আর ঘরে বানানো কালি দিয়ে। লেখার জন্য ছিল কলার পাতা। তারপর হাইস্কুলে ভরতি হওয়ার পর দোয়াত আর নিবের কলম ব্যবহার করেছেন। এই ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত উন্নত। ধাতু বা শিংয়ের নিব লাগানো থাকত কাঠের হ্যান্ডেলে, আর কালি তৈরির ঝামেলাও গেল কমে, এসে গেছে কালি তৈরির বড়ি। কলেজ জীবনে এসে তিনি পেয়েছেন ঝরনা কলম, প্রথম কেনা জাপানি পাইলটের কথা তাঁর স্মৃতিতে উজ্জ্বল। আরও পরবর্তী সময়ে, অর্থাৎ কর্মজীবনে তিনি দেখেছেন ফাউন্টেন পেনকে পিছনে ফেলে ডট পেনের রমরমা।
কলমের দ্বারা নিজের হাতে লেখাটা লেখকের কাছে প্রীতিকর। কিন্তু বিজ্ঞানের চরম উন্নতিতে লেখালিখির কাজকে অতিসহজসাধ্য ও উপযোগী করতে কম্পিউটারের ব্যবহার আজ সর্বত্র। তাই লেখক নস্টালজিক হয়ে পড়েন কলমের অবলুপ্তির কথা ভেবে।
লেখক আরও চিন্তিত হন যে, ‘হাতের লেখা’ হয়তো চিরতরে মুছে যাবে! শেকসপিয়র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র যে সকল অমর রচনা লিখে গেছেন নিব পেন বা ঝরনা কলমে, লেখালিখির ক্ষেত্রে সেই কলমের গুরুত্ব হয়তো একদিন শেষ হয়ে যাবে! কী হবে ক্যালিগ্রাফিস্টদের অস্তিত্ব? একসময় বিভিন্ন রাজদরবারে যাঁদের অত্যন্ত কদর ছিল, তাঁরা কী ব্রাত্য হয়ে পড়বেন? এ সকল ভাবনায় লেখক বিপন্ন বোধ করেন। তবে ভবিষ্যদ্রষ্টা লেখক বলেছেন, ‘ইতিহাসে ঠাঁই কিন্তু তার পাকা’।