‘কালপুরুষ নক্ষত্রের সঙ্গে চন্দ্রনাথের তুলনা করিয়া আমার আনন্দ হয়।’- উক্তিটির বক্তা কে? তিনি কেন এমন উক্তি করেছেন? |
প্রশ্নের এই উক্তিটি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। গল্পকথক নরেশ তার সহপাঠী চন্দ্রনাথ সম্পর্কে উক্তিটি করেছে। নানা কারণে গল্পকথকের মনে হয়েছে আকাশের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক কালপুরুষের সঙ্গে চন্দ্রনাথের সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন-
নক্ষত্রমণ্ডলীর মধ্যে ভীমকায় আকৃতির কারণে কালপুরষ সমাদৃত। এই খাধারী নক্ষত্রটি অন্ধকার আকাশের বুকে ভীমাকৃতিসহ উজ্জ্বলভাবে প্রদীপ্ত হয়ে থাকে। চন্দ্রনাথের আকৃতিও তেমনই সবল ও বলিষ্ঠ। কথকের মতে—— —‘দীর্ঘাকৃতি সবল সুস্থ দেহ ভীমকায় আকৃতি নির্ভীক দৃষ্টি কিশোর চন্দ্রনাথ।
আকাশে হাজার নক্ষত্রের মধ্যেও কালপুরুষ আপনার ঔজ্জ্বল্য ও দৃপ্তভঙ্গিমার কারণে স্বতন্ত্র স্থান দখল করতে পেরেছে। চন্দ্রনাথের ব্যক্তিত্ব, স্বাভিমান বা আত্মমর্যাদাবোধ, হার না মানা মনোভাবের কারণে ছাত্রমহলে সেও স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী। সে প্রবল আত্মপ্রত্যয়ী এবং আপন সিদ্ধান্তে অটলভাবে উজ্জ্বল, যা কালপুরুষের ঔজ্জ্বল্যকেই মনে করায় কথককে।
অন্ধকার অনন্ত আকাশের বুকে সম্পূর্ণ একাকী কালপুরুষ। নিজের ঔজ্জ্বল্যে এতটাই উজ্জ্বল যে তার পাশে আর কেউই আসতে সাহসও করে না। অর্থাৎ জীবনপথে সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ সে– তেমনই চন্দ্রনাথও আপন ব্যক্তিত্ব, জীবনাদর্শতে এতটাই স্বতন্ত্র যে ব্যক্তিগত নিঃসঙ্গ বা সামাজিকভাবে সম্পূর্ণ একাকী-নিঃসঙ্গ তার যাত্রাপথ। কোনো বাঁধনেই যেন সে আটকে থাকতে চায়নি। অনমনীয় জেদই তাকে কালপুরুষের মতো নিঃসঙ্গ করে তুলেছে।
গল্পের শেষাংশে কল্পনায় কথক দেখেছেন—রাত্রের জনহীন পথে চন্দ্ৰনাথ যেন একাই চলেছে, তার ‘মাথার উপরে গভীর নীল আকাশে ছায়াপথ, পার্শ্বে কালপুরুষ নক্ষত্র সঙ্গে সঙ্গে চলিয়াছে।’ এসকল কারণেই বক্তা কালপুরুষের সঙ্গে চন্দ্রনাথের তুলনা করেছেন।