কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল/সুন্দরের আরাধনা। -উক্তিটির যথার্থতা প্রতিপাদন করো। |
বর্তমান কবিতার ‘অপমানিত ইতিহাস’-এর বিপরীতে কবি স্থাপন করলেন এশিয়া, বিশেষত ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা স্নাত শুচিস্মিত প্রতিবেশকে, যেখানে-
আর কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল সুন্দরের আরাধনা। যে আরাধনায় অনুরণিত হয়েছিল ভারতীয় ঔপনিষদিক ‘আনন্দ রূপং অমৃতং যদ্বিভাতি’। সেই ‘আনন্দাদের খল্লিমানি ভূতানি জয়তে’-এর চিরন্তন বাণী। অন্যত্র কবির সংগীতে আমরা যেন শুনতে পাই-‘তাই তোমার আনন্দ আমার পর তুমি তাই এসেছ নীচে।’ কবি যেন গেয়ে উঠবেন- ‘ঐ মহামানব আসে’। এই সংগীত সেই মহামানবের শুভাগমনকে সংবর্ধিত করার উজ্জীবক সংগীত।
কবির ধারণা এই যে, যুগান্তের কবি ক্ষমার বাণী প্রচার করে মঙ্গলের সাধনায় ব্যাপৃত হলে তবেই পুনরায় সভ্যতার নবজাগরণ সম্ভব। তাই কবি মত প্রকাশ করেছেন যে, সেই ভাবী কথক, ভারতীয় সভ্যতার বিবেকী উচ্চারক সাম্রাজ্যগর্বীর আক্রমণের বিরুদ্ধে ‘আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে’ সমানুভূতিতে আবেগঋদ্ধ উচ্চারণে বুদ্ধদেবের উত্তরসূরি রূপে ‘মা হিংসী’ বাণীর ধারাবাহিকতায় বলুক ‘ক্ষমা করো’। কারণ, এটিই হবে হিংস্র প্রলাপের মধ্যে চিরজীবিতের জয়গানে উজ্জ্বল ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’। বাস্তবিক হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী ও নিত্য নিষ্ঠুর দ্বন্দ্বের মধ্যে কবির অপরাহত মানবতার জয় ঘোষিত হল আফ্রিকার উদ্দেশে সংবেগ সমৃদ্ধ উচ্চারণের অনুরণন। আসলে যুদ্ধ ও হিংস্র পশুশক্তির সাহায্যে যে জগতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, এ কথা রবীন্দ্রনাথ অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বিশ্বাস করতেন। কেন-না, কবির লক্ষগোচর হয়েছিল যে সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের মধ্যে বাজার ও উপনিবেশগুলি ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে মহাসমর বাঁধিয়ে তুলেছে। আধুনিক ইউরোপীয় সভ্যতা সত্যে, ক্ষমায়, সংযমে ও শান্তিতে বিশ্বাস করে না, অথচ সভ্যতার পুনর্বিকাশে তা সামগ্রিকভাবে প্রয়োজন।