“এল মানুষ-ধরার দল”-‘মানুষ-ধরার দল’ বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন? তাদের আগমনের পূর্বে আফ্রিকা কীরকম ছিল? |
এই সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসীর দল তাদের আত্যন্তিক জিগীষাকে অবলম্বন করে জগৎজোড়া সাম্রাজ্য তথা একাধিপত্য স্থাপনের প্রয়াসে আফ্রিকায় পৌঁছোয়। তাদের আগমনের পূর্বে আফ্রিকা প্রকৃতির সবুজ নেশায় আচ্ছন্ন ছিল। সভ্যতা সৃষ্টির আদি কালে প্রাগৈতিহাসিক অবিন্যস্ত সময়পর্বে প্রকৃতি যখন আদিমতায় মত্ত ছিল তখন আফ্রিকারও রূপ বিবর্তন ঘটে। ‘উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে’ বিশ্বস্রষ্টা যখন সৃষ্টিকর্মে ব্যস্ত তখন তিনি নিজেই বহু সময় নিজের কর্মে অসন্তুষ্ট হয়ে বারবার বিধ্বস্ত করেছিলেন জগতকে। ভাঙাগড়ার এই খেলাকে কবির মনে হয়েছে জগৎনির্মাতার ‘অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা নাড়া’। সেই উত্তাল সময়পর্বে প্রাকৃতিক আলোড়ন, বিপর্যাস ও সৃষ্টি অভিমুখী দ্রুত পরিবর্তনকে অবলম্বন করেই উত্তাল, গর্জনমুখর ‘রুদ্র সমুদ্রের বাহু’ শান্ত ও সৌষম্যময় আফ্রিকাকে প্রাচী ধরিত্রীর সান্নিধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। এরপর সে ‘বনস্পতির নিবিড় পাহারায়’ নির্বাসিত হয়। সেখানে সূর্যালোকের কার্পণ্যময় বিস্তারের মাঝে নিজের তমসাবৃত সত্তা যোগে জাগ্রত হয়ে ওঠে আফ্রিকা। অরণ্য প্রকৃতির নিভৃত অবকাশে জাগ্রতসত্তা আফ্রিকা দুর্গমতার রহস্য সংগ্রহ করতে থাকে এবং আরও বেশি মায়াময় হয়ে ওঠে। জল-স্থল-আকাশের দুর্বোধ্য সংকেতগুলিকে চিনতে চিনতে তার চেতনাতীত গহনে জেগে উঠছিল প্রকৃতির জাদুমন্ত্র। বস্তুত, তার গহনতা দুর্গমতা ভীষণতা ধীরে ধীরে প্রকৃতির রহস্যঘন প্রকাশকেও যেন বিদ্রূপ করতে থাকে। নিজের নেশায়, নিজের আদিমতা ও গহনতায় নিজেই আবিষ্ট হয়ে উঠে আফ্রিকা সকল শঙ্কাকে পরাজিত করে মূর্তিমান বিভীষিকা হয়ে উঠতে চাইছিল; ‘তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে’ মুখরিত করতে চাইছিল বিশ্বকে। প্রাচীন আফ্রিকা ছায়াবৃতা। তার কৃষ্ণাবরণে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল তার মানবরূপ। সকলের উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে তা অগোচরেই রয়ে যায়।