একটি ঝড়ের রাত/ একটি স্মরণীয় দিন 500+ শব্দে

একটি ঝড়ের রাত/ একটি স্মরণীয় দিন

একটি ঝড়ের রাত/ একটি স্মরণীয় দিন
একটি ঝড়ের রাত/ একটি স্মরণীয় দিন

ভূমিকা

সে রাতটার কথা আমার আজও মনে পড়ে। খুব করে মনে পড়ে। খু-উ-ব। কী করে ভুলব সেই ঝড়ের বিধ্বংসী রূপ? ঝড়টা তো শুধু মুনিয়াদের পুরো পরিবারের স্বপ্নকেই যে শেষ করে দিয়েছিল, তা তো নয়। আমাদের বাড়ির পাশের বকুলগাছটায় বাসা বাঁধা ঘুঘু দম্পতি কিংবা ছাদের ওপরে সযত্নে তৈরি করা আমার শখের বাগানটারও কি কম ক্ষতি করেছিল? তবে সত্যি বলতে কি, ঝড়ের সেই উদ্দাম নৃত্য, আমাকে কিছুটা মুগ্ধও করেছিল। সেদিনটাকে তাই আমার জীবনের একটি স্মরণীয় দিনও বলা যেতে পারে।

ঝড়ের পূর্বাভাস

দিনটা ছিল শুক্রবার। সামনে পরীক্ষা ছিল বলে একটু রাত জেগেই পড়ছিলাম কদিন ধরে। সেই শুক্রবারেও সেরকমই পড়াশুনা চলছিল। পড়ার ঘরে ভ্যাপসা গরমের মধ্যে বসে অঙ্ক করছিলাম আমি। মন বসাতে পারছিলাম না বলে বারবারই অঙ্কে ভুল হয়ে যাচ্ছিল। একটা সময় দেখি জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে ঘরের ভিতরে। ক্রমশ সেই বাতাসের বেগ বাড়তে লাগল। তার পরপরই বিদ্যুৎ উধাও। বাইরে বেরিয়ে আসতেই বুঝতে পারলাম এখনই ঝড় উঠবে। প্রলয়ংকারী এক ঝড়। মনে পড়ল ঝড় আসার আগে থমকে থাকে গাছপালা। এবারেও নিশ্চয় ছিল। আমি ঘরের ভিতরে বসে পড়ছিলাম বলে টের পাইনি। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি সারা আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গিয়েছে। গতকাল রাতেও এই অবস্থা হয়েছিল।-

‘সমস্ত মৃত নক্ষত্রেরা কাল জেগে উঠেছিলো– আকাশে এক তিল
ফাঁক ছিল না;’
(-জীবনানন্দ দাশ)

তবে তর্জন-গর্জন করেও গতকাল আর ঝড় আসেনি। বুঝতে পারছি আজকে আর সেরকমটা হবে না। ঝড় আসবেই। সেই কারণেই যেন-

‘আকাশ কোণে সর্বনেশে
ক্ষণে  ক্ষণে উঠছে হেসে’
(-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

মেঘবালিকারা। তা-ই শুধু নয়। গাছপালাগুলোও যেন বুঝে গিয়েছে এবার প্রস্তুত হতে হবে।

ঝড়ের আগমন

বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। প্রবল বেগকে সঙ্গী করে চলে এলো সে। দেখতে দেখতে শুরু হয়ে গেল ঝড়ের মাতন। গাছের মাথাগুলো প্রবল বেগে দুলতে শুরু করে দিল। দরজা-জানালার কপাটগুলোও যেন আজ প্রবল বিদ্রোহী। ওদিকে শুনতে পেলাম মা চিৎকার করছেন, ‘ওরে, দরজা-জানালাগুলো বন্ধ কর্ শিগগির। ওগুলো যে ভেঙে পড়বে।’ দৌড়ে গেলাম মায়ের আদেশ পালন করবার জন্য। কাজ শেষে আবারও ফিরে এলাম বারান্দায়। এসে দেখি ঝড়ের বেগটা যেন বেড়েছে আরওই।

প্রকৃতির অবস্থা

ধুলোবালি আর গাছের পাতা আমার গায়ে-চোখে-মুখে ভরে যেতে লাগল। সুপুরিগাছ কিংবা নারকেলগাছগুলোকে দেখে মনে হতে লাগল তারা যেন ঝড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাটিকে প্রণাম করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। অন্যদিকে একরোখাভাবে ঝড়টা শো শো শব্দ তুলে ছুটছে তো ছুটছেই। কালো জটাজাল মেলে আচ্ছন্ন করতে চাইছে বিশ্ববাসীকে। বুঝলাম-

‘আজিকে দুয়ার বুদ্ধ ভবনে ভবনে, 
জনহীন পথ কাঁদিছে ক্ষুব্ধ পবনে,
দমকে দীপ্ত দামিনী।’
(-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

ঝড়ের  রূদ্ররূপ

এই ঝড়ে মানুষের কী অবস্থা হবে, তা নিয়ে ভাবছিলাম। হঠাৎ দেখি কী যেন একটা আমার মাথাকে স্পর্শ করে বারান্দায় এসে পড়ল। তার পরপরই মড়-মড়াৎ। ঝপাস। দৌড়ে গিয়ে টর্চ এনে দেখি পড়ে রয়েছে দুটো ভাঙা ডিমসুন্ধু একটা পাখির বাসা। ওদিকে আমাদের বাড়ির পিছনে ভেঙে পড়েছে হিমসাগর আমগাছটার বড়ো ডালটা, যে ডালে বাসা বেঁধেছিল এক ঘুঘু দম্পতি। ছাদ থেকে পড়ে ভেঙে গিয়েছে আমার ছয়খানা ফুলের টব। বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখি আমাদের বাড়ির পাশের মুনিয়াদের ঘরের টিনের চালও কখন যেন উড়ে গিয়েছে। ওদের জন্য আশঙ্কা হল খুব। ওরা কোথায় এখন?

ঝড় থামা: ফলাফল

বেশ কিছুক্ষণ বাদে কমে এল ঝড়ের বেগ। কিন্তু সেখানেই পরিস্থিতিটা শেষ হল না। ঝড় যেখান থেকে তার ধ্বংসলীলা শেষ করেছিল, সেখান থেকেই যেন যাত্রা শুরু করল প্রবলতর বৃষ্টি। প্রথমে-

‘ গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি
গরজে গগনে গগনে, গরজে গগনে।’

(-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

সঙ্গে থেকে থেকে বিদ্যুৎ-চমক, তারপর বৃষ্টির পরে বৃষ্টি। তাও সাধারণ ধারাপাত নয়। একেবারে শিলাবৃষ্টি আবহাওয়া এতই ঠান্ডা হয়ে উঠল যে, বৈশাখের রাতেও আমার শীত শীত করতে লাগল।

উপসংহার

সেদিনের ঝড়বৃষ্টি থেমেছিল প্রায় ঘণ্টাখানেক বাদে। ততক্ষণে আমি ভিজে একশা হয়ে গিয়েছি এবং ঝড়ের বাস্তব রূপ প্রত্যক্ষ করার মুগ্ধতাটুকু ছাপিয়ে আমার মনে জেগে উঠেছে মুনিয়াদের ভবিষ্যৎ-চিন্তাসহ অন্যান্যদের আরও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা। পরদিন সকালে রাস্তায় বেরিয়ে দেখেছিলাম আমি যা ভেবেছিলাম, পরিস্থিতি তার থেকেও ভয়ানক। ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। ঝড়টা কত কিলোমিটার বেগে এসেছিল কে জানে।

Leave a Comment