একটি ছুটির দিন রচনা 300+ শব্দে

একটি ছুটির দিন রচনা

একটি ছুটির দিন রচনা
একটি ছুটির দিন রচনা

ভূমিকা

মানুষের জীবন হল সুখ ও দুঃখের স্মৃতিময় ভাণ্ডার। এই স্মৃতিগুলির মধ্যে কোল্টি অধিক স্মরণীয় তা বিশেষ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। এখন আমার হৃদয়ে যে দিনের স্মৃতির ঢেউ আছড়ে পড়ছে তা পূর্ব মেদিনীপুরের অতিপরিচিত দিঘার সমুদ্র সৈকতে কাটানো একটি দিন। কারণ সমুদ্রের প্রতি আমার প্রথম ভালোবাসার সূচনা এখানেই হয়েছিল।

পরিবেশ

দিঘায় পদার্পণমাত্রই নীল সমুদ্রের দর্শন প্রায় অসম্ভব। এর কারণ সমুদ্রের প্রান্ত পর্যন্ত পসরা সাজিয়ে বসেছে পসারিরা। সামুদ্রিক মাছের মতোই থিকথিক করছে মানুষ। ফেরিওয়ালার হাঁকডাক কলকাতার গলিকেও যেন হার মানিয়ে দেয়। এর সঙ্গে আছে প্রহরারত পুলিশকর্মীরা। কিছুক্ষণ পরই অবশ্য পৌঁছে গেলাম সমুদ্রতীরে। সেখানে অনন্ত জলরাশি নীল আকাশের সঙ্গে মিলেমিশে যেন একাকার।

অনুভূতি

সকালে সমুদ্রস্নানের পর প্রাতরাশ সেরে হোটেলের বারান্দা থেকে পড়ন্ত দুপুরে সাগরের সঙ্গে দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার ঘটল। মাছ ধরার জন্য নেমে পড়েছে আবালবৃদ্ধবনিতা। বিশেষ করে মহিলারা মাছসংগ্রহে ব্যস্ত। সব কিছু তুচ্ছ করে সমুদ্রের গর্জন কানে প্রবেশ করছে। এক যুবক বারবার জাল সরিয়ে শাঁখ আর ঝিনুক সংগ্রহে ব্যস্ত। সকালের পরিবেশ-পরিস্থিতি-বর্ণ-রূপ একেবারে বদলে গিয়েছে।

বালিয়াড়িতে বিকেলে

সমুদ্রের কাছে থেকে বাঙালি পর্যটক দিবানিদ্রা দেবে হোটেলের নরম বিছানায় তাই কখনও হয়? সুতরাং পড়ন্ত বিকেলে রোদের রঙিন আভাখানি সমুদ্রের জলে কীভাবে লীন হয় সেই দৃশ্য দেখার জন্য সমুদ্রতীরে উপস্থিত হলাম। সমুদ্রের কিনারা ধরে এগিয়ে চললাম পূর্বাভিমুখে। পৌঁছোলাম যেখানে, সেখানকার নাম জিজ্ঞাসা করে জানলাম ‘নিউ দিঘা’।

সন্ধ্যার অভিজ্ঞতা

পূর্ণিমার সমুদ্রের দিকে চেয়ে মনে হল, কে যেন সমুদ্রের নীল জলে আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে রেখেছে। মাঝে মাঝে খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘ জোৎস্নায় যেন ডিঙির রূপ লাভ করেছে। প্রহরারত পুলিশ জানিয়েছে এখন সমুদ্রসৈকতে থাকা বিপজ্জনক। এ যেন রবীন্দ্রনাথের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্পে স্বপ্নভঙ্গকারী মেহের আলির অতর্কিত সংলাপ- “তফাৎ যাও, তফাৎ যাও, সব ঝুট হ্যায়।”

উপসংহার

সমুদ্রের সেই দিনের স্মৃতি আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেই প্রথম আমি অনন্ত বিশালত্বকে প্রত্যক্ষ করলাম। সেই বিপুলতার মাঝে আমি উপলব্ধি করেছিলাম মানুষের অস্তিত্ব এই মহাবিশ্বে কত ক্ষুদ্র। সেই বোধ আমার সমস্ত অহংকে যেন সেদিন গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। আজও সেই স্মৃতি আমার মণিকোঠায় ফিরে ফিরে আসে আর প্রতিধ্বনিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গান-
“বিপুল তরঙ্গ রে,
সব গগন উদ্বেলিয়া–মগন করি অতীত অনাগত 

Leave a Comment