উনিশ শতকের ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রভাব কী ছিল
উনিশ শতকের ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রভাব কী ছিল? |
ঊনিশ শতকের ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রভাবে ভারতে শিক্ষা, সমাজ, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক জীবনে যে গতিশীলতা ও সৃজনশীল উদ্যম পরিলক্ষিত হয়, তাকে ভারতীয় রেনেসাঁ বলে অভিহিত করা হয়।
উনিশ শতকের ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রভাব
নবযুগের সূচনা
পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ফলে ভারতে নবযুগের সূচনা হয়েছিল। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আলোকপ্রাপ্ত ভারতবাসী আধুনিকতার পথে পা বাড়িয়েছিল। তারা রাজনীতি, দর্শন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করেছিল। ফলে ভারতীয়দের মধ্যে এক নবচেতনার এবং ভারতে নবযুগের সূচনা হয়েছিল।
ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশ
পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ফলে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটেছিল। জাতীয়তাবাদ ও উদারনৈতিক আদর্শে উদ্দীপ্ত ভারতীয়রা নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিল। আসলে ভারতীয় এবং ইংরেজদের স্বার্থের সংঘাতই জাতীয়তাবাদের উন্মেষের মূল কারণ ছিল।
ইংরেজি-শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণির উদ্ভব
পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রসারের ফলে ভারতে ইংরেজি-শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণির উদ্ভব হয়েছিল। ভারতীয়দের এক অংশ চাকরিলাভের জন্য পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করেছিল। তা ছাড়া অনেকে ইংরেজি শিখে উকিল, ডাক্তার, শিক্ষক, সাংবাদিকতার পেশায় নিযুক্ত হয়েছিল। ব্যাবসাবাণিজ্যের সুবিধার জন্য ব্যবসায়ীরাও ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করেছিল। বাংলায় ইংরেজি-শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণির মধ্যে ছিল শিক্ষিত চাকরিজীবী, উকিল, ডাক্তার, শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, ব্যবসায়ী প্রভৃতি পেশার লোকেরা।
সমাজসংস্কার আন্দোলন
বিশ্বের সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন
ইংরেজি শিক্ষা ও পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার লাভের ফলে ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে বিশ্বের সভ্যতার মেলবন্ধন ঘটে। ভারতীয়রা পাশ্চাত্যের মানবতাবাদ, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র প্রভৃতি আদর্শের সঙ্গে পরিচিত হয়। ফলে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ, ফরাসি বিপ্লব, ইটালির ঐক্য আন্দোলন ও ইউরোপের দার্শনিকদের আদর্শ প্রভৃতি শিক্ষিত ভারতীয়দের মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।
নারীশিক্ষার প্রসার
ভারতীয় সমাজে বাল্যবিবাহ, পর্দাপ্রথা, রক্ষণশীল মানসিকতা নারীশিক্ষা প্রসারের পথে প্রধান বাধা ছিল। উনিশ শতকে ইংরেজ সরকার, খ্রিস্টান মিশনারি ও কয়েকজন প্রগতিশীল ব্যক্তি নারীশিক্ষা প্রসারে সচেষ্ট হয়েছিলেন। বিদ্যাসাগর ১৮৫৭ থেকে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলার বিভিন্ন জেলায় নিজ ব্যয়ে মোট ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। চার্লস উডের প্রতিবেদনে নারীশিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।