‘ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহুকালের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রকাশ পায় ‘আফ্রিকা’ কবিতার মধ্যে।”-মন্তব্যটির সপক্ষে যুক্তি স্থাপন করো। |
আফ্রিকার মানুষের ওপরে বল্গাহীন অত্যাচারের কথাই নয়, বরং সভ্যতা মদগর্বিত ইউরোপের চেতনায় নিহিত মানবসত্তার অনপনেয় অপমানের যন্ত্রণায়ও বিদ্ধ কবি। এক সুগভীর ভালোবাসা কবি জগৎ ও জীবনের প্রতি পোষণ করেছেন বলেই এই মর্ত্যমমতা তাঁর কাব্য তথা বর্তমান কবিতাকেও এমন মাধুর্য প্রদান করেছে। বাস্তব ঘটনাপ্রবাহের পর্যবেক্ষণ থেকেই কবি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন যে, যুদ্ধের মূল কারণ আসলে বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির পররাজ্য আগ্রাসন ও সাম্রাজ্যবিস্তারের লালসা।
বলা চলে সাম্রাজ্য প্রসারের শেষ যুগ হল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ। উক্ত সময়ে বড়ো বড়ো সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির বিশেষত এশিয়া ও আফ্রিকার বাজার ও ঔপনিবেশগুলিতে সরাসরি আগ্রাসন তথা দখল নিয়ে অবিরাম যুদ্ধ ও সংঘর্ষ চলছে। এশিয়া-আফ্রিকার উপনিবেশ ও পরাধীন দেশগুলিতে এইসব বড়ো বড়ো সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির নগ্ন শোষণ-শাসনের ভয়াল দিকগুলি রবীন্দ্রনাথ তাঁর যৌবনের সূচনাকাল থেকে স্পষ্টই প্রত্যক্ষ করেছিলেন।
ইটালির আবিসিনিয়া আক্রমণ উপলক্ষ্যে আলোচ্য কবিতায় সাম্রাজ্যবাদীদের বর্বর লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ধিক্কার বর্ষণ করেছেন, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ঋদ্ধ কবি, সেই সাম্রাজ্যলিঙ্গু আক্রামক মানুষ-ধরার দলের হিংস্র চেহারার বর্ণনায় তীব্রতা প্রদর্শন করেন-
তারা আফ্রিকার নিকষঘন প্রকৃতির মতো সূর্যালোক বঞ্চিত অর্থাৎ ‘সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে’-ও গর্বোদ্ধত। কবি তাদের বীভৎস রূপটি কবিতায় দেখালেন এইভাবে-
পরিশেষে বলা যায়, আফ্রিকার ইতিহাসে সভ্য মানুষের হননোদ্যত রূপের দ্বারা নীরব প্রকৃতির যে অপমান, সেই সত্য কবির অন্তরকে করেছে ব্যথিত।