ইংল্যান্ডের তুলনায় ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রে শিল্পায়ন দেরিতে শুরু হওয়ার কারণগুলি আলোচনা করো |
ভূমিকা
ফ্রান্স
- ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের সামন্ত ও অভিজাতদের শিল্পের তুলনায় জমির প্রতি আগ্রহ ছিল বেশি।
- নেপোলিয়নের পতনের পর ফ্রান্সের বৈদেশিক বাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছিল।
- ফ্রান্সে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিল না। সর্বোপরি, শিল্পবিপ্লবের জন্য যে মূলধন ও পরিকাঠামোর প্রয়োজন ছিল, ফ্রান্সে তার অভাব পরিলক্ষিত হয়।
- ফ্রান্সে একাধিক বিপ্লব ঘটায় রাজনৈতিক অস্থিরতাও শিল্পায়নে বাধার সৃষ্টি করে।
এইসব নানা কারণে ফ্রান্সে শিল্পায়ন দেরিতে শুরু হয়।
ফ্রান্সে শিল্পায়নের অগ্রদূত ছিলেন ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন। তাঁর আমলে ফ্রান্সে রেলপথের প্রসার ঘটে এবং কয়লা, লোহা ও বস্ত্রশিল্পেরও যথেষ্ট উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। ক্রমশ ইউরোপে শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ফ্রান্স দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।
জার্মানি
প্রথমত: ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে জার্মানি ৩৯টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এই সকল রাজ্যগুলির মধ্যে কোনোপ্রকার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ঐক্য ছিল না।
দ্বিতীয়ত জার্মানির যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল অনুন্নত।
তৃতীয়ত: কৃষিপ্রধান জার্মানিতে শিল্পদ্রব্যের চাহিদাও ছিল কম। আর জার্মানির কোনো উপনিবেশ না থাকায় শিল্প মানসিকতা গড়ে ওঠেনি।
চতুর্থত: শিল্পায়নের অন্যতম উপাদান হল মূলধন। সেদিক থেকেও জার্মানি ছিল দুর্বল।
১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ঐক্যবন্ধ হওয়ার পর থেকে জার্মানিতে শিল্পায়নের গতি দ্রুত হয়। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে জার্মানি শিল্পনির্ভর দেশে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে বিসমার্ক ও কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়মের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিসমার্ক সংরক্ষণ নীতির হারা জার্মানিতে শিল্পায়নের যে সূচনা করেন পরবর্তীকালে দ্বিতীয় উইলিয়ম শিল্পায়ন ও বহির্বাণিজ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে এর উন্নয়ন দ্রুততর করে তোলেন। কয়লা, লোহা ইস্পাত, বস্ত্রশিল্প ইত্যাদি ছিল জার্মানির শিল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য।