‘আশ্চর্য, কোথাও কিছু উলটোপালটা নেই, অন্য রকম নেই, একেবারে নিছক মানুষ।’-কার সম্পর্কে, কার এরকমটা মনে হয়েছিল? তিনি যে একেবারে নিছক মানুষ, তা কীভাবে বোঝা গিয়েছিল? |
আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে উল্লিখিত তপনের ছোটোমাসির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল একজন অধ্যাপক লেখকের। তাঁর সম্পর্কেই এরকমটা মনে হয়েছিল তপনের।
ছেলেবেলা থেকেই গল্প শুনতে শুনতে এবং একটু বড়ো হবার পর গল্প পড়তে পড়তে লেখকদের প্রতি অন্য এক ধারণা গড়ে ওঠে তপনের। যে-কোনো লেখককে তার মনে হত সাধারণ মানুষদের থেকে একটু আলাদা। অর্থাৎ আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে লেখকদের কাজের কোনো মিল নেই-তেমনটাই মনে করত সে। লেখকদের যে কাছ থেকে দেখা যায়, তাও সে জানত না। এই অবস্থায় তপন যখন জানতে পারে তার ছোটোমেসো একজন সত্যিকারের লেখকও, তিনি বই লেখেন, তা ছাপাও হয়, তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় সে। সেই মেসোকে কদিন ধরে খুঁটিয়ে দেখার ফলে তপনের যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা থেকে তার জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়। সে বুঝতে পারে-
(ক) কোনো উলটোপালটা নেই তার পূর্বভাবনার মতো লেখক মেসোর মধ্যে কোনো উলটোপালটা নেই, নেই অন্যরকমও।
(খ) বাবা-মামা-কাকাদের মতো তার বাবা, ছোটোমামা বা মেজোকাকুরা যেমন মানুষ, লেখক মেসোও তার বাইরে নন।
(গ) একই ধরনের কাজকর্ম অন্যেরা যেমন দাড়ি কামান, সিগারেট খান, খেতে বসে ‘আরে ব্যস, এত কখনো খাওয়া যায়?’ বলে অর্ধেক তুলিয়ে দেন, চান-ঘুমের সময় চান-ঘুম সারেন, লেখক মেসো সেসবই করেন।
(ঘ) ছোটোমামাদের মতো গল্প-আড্ডা ছোটোমামাদের মতো লেখক মেসো বা নতুন মেসোও খবরের কাগজের সব কথা নিয়ে প্রবলভাবে গল্প ও তর্ক করেন আর শেষ পর্যন্ত ‘এ দেশের কিছু হবে না’ বলে সিনেমা দেখতে কিংবা বেড়াতে বেরিয়ে যান।
-নতুন মেসোর বা লেখক মেসোর এসব কাজকর্ম থেকেই তপন বুঝতে পেরেছিল লেখক হলেও তিনি একেবারে নিছক একজন মানুষ।