আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতায় কবির বক্তব্য বিষয়টি বুঝিয়ে দাও

'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় কবির বক্তব্য বিষয়টি বুঝিয়ে দাও
‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবির বক্তব্য বিষয়টি বুঝিয়ে দাও।
আধুনিক কালের অত্যন্ত সংবেদনশীল কবি হলেন শঙ্খ ঘোষ। তাঁর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটিতে সমাজব্যবস্থার এক সংকট মুহূর্তের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। কবিতাটি উত্তমপুরুষের বহুবচনের জবানিতে রচিত। অর্থাৎ, অনেক মানুষের অনুভূতির সঙ্গে কবি একাত্ম হয়ে গেছেন।

এই কবিতায় কবি বিপন্ন মানুষদের কথা তুলে ধরেছেন, যারা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপন্ন। এইসব মানুষদের ডানদিকের পথ ধসে রুদ্ধ আর বামদিক গভীর গিরিখাতের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত। আশ্রয়হারা এইসব মানুষদের মাথার উপরের আকাশও নিরাপদ নয়, সেখানে রয়েছে বোমারু বিমানের আনাগোনা। এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে পদক্ষেপ ফেলতে হয় সে স্থানটুকুও নিরাপদ নয়। এমনি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষেরা আজ গৃহহারা। তাদের শিশুদের শব ছড়ানো রয়েছে চারিদিকে। সাধারণ মানুষ যখন এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের টিকে থাকাতেই সংশয় প্রকাশ করেছে তখন কবি তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য ডাক দিয়েছেন-

“আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।”

কিন্তু কেবল সমাজের বাহ্যিক অবক্ষয় নয়, বিপন্ন মানুষ আজ মানসিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছে। কারণ, তাদের নিজেদের কোনো ইতিহাস নেই, যদিও-বা থাকে সেই ইতিহাসে প্রকৃত সত্যের উন্মোচন ঘটেনি-

“অথবা এমনই ইতিহাস

আমাদের চোখমুখ ঢাকা”


এই সকল বিপন্ন দীন মানুষেরা সহানুভূতির কাঙাল। তাদের কথা পৃথিবীর অন্যান্য মানুষ কোনোভাবেই মনে রাখে না। তাই পৃথিবী আদৌ বেঁচে আছে কি না ভেবে কবি বিস্মিত হন। প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করে অল্প যে কয়জন টিকে আছে তাদের প্রতি কবির আহ্বান-

“আয় আরো হাতে হাত রেখে
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।”

-এই আহ্বান পারস্পরিক ঐক্য সুদৃঢ় করে নিজেদের শক্তি একত্রিত করে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন গড়ে তোলার। অর্থাৎ, কবিতার শুরুতে যে হতাশার প্রকাশ দেখা গিয়েছিল পরিশেষে তা আশাবাদে শেষ হয়েছে।

Leave a Comment