আমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন রচনা 400 শব্দে । First day of my school life essay

আমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন রচনা

আমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন রচনা
আমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন রচনা

ভূমিকা

বিদ্যালয় জীবন যে-কোনো মানুষের কাছেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিদ্যালয় থেকেই প্রথম প্রথাগত শিক্ষার সূচনা হয়। ব্যাপক অর্থে সারাজীবন ধরেই আমাদের শিখন চলতে থাকে। প্রতিদিনের এই নতুন শিক্ষা থেকেই আমরা প্রাত্যহিকতার আবর্তন থেকে মুক্ত হই। তবুও বিদ্যালয় জীবনের সূচনা সারাজীবনের অন্যতম স্মরণীয় বিষয়।

বিদ্যালয় শিক্ষা

সারাজীবনব্যাপী আমাদের শিক্ষা চললেও, বিদ্যালয় জীবনই আমাদের নিয়মিত শিখন পদ্ধতির রোজনামচা লেখে। জীবনের প্রারম্ভে একটি নির্দিষ্ট বয়সে শিশুকে বিদ্যালয়ে ভরতি করা হয়। শিক্ষাবিদরা সেই সময়কেই শিক্ষাগ্রহণের উপযুক্ত সময় বলে গণ্য করেছেন। এই সময়ে শিশুরা বিদ্যালয়ে যায় এবং তার চারপাশের পরিবেশ থেকে শিক্ষালাভ করে। এইরকমই একটি দিনে আমিও প্রথম বিদ্যালয়ে যাই।

প্রথম দিনের স্মৃতি

বিদ্যালয়ের প্রথম দিনের স্মৃতি এখন সময়ের ধুলো মেখে ধূসর হয়ে গিয়েছে। তবু যেটুকু স্মৃতি রোমন্থনে উঠে আসে তা রামধনুর মতোই রঙিন। এপ্রসঙ্গে ‘জীবনস্মৃতি’-র ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই মূল্যবান কথাটা মনে পড়ে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন আসলে স্মৃতিকথা লিখতে গেলে আমরা খানিক স্মৃতির সঙ্গে খানিক কল্পনার প্রলেপ দিই। আমিও সেই ধূসর স্মৃতির পথ ধরেই চললাম আমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনে। শিশুমনের অপার বিস্ময়ে বিদ্যালয়কে নিয়ে ছিল হাজারো কৌতূহল।

যখন বিদ্যালয়ে যাওয়ার অনুমতি মেলেনি তখন বিদ্যালয় তার অজানা জগতের অচেনা আকর্ষণ নিয়ে আমাকে ভাবাত। মনে হত যেন কোন্ অচেনা রূপকথার হালচাল সেখানে রোজ ঘটে চলেছে। আমার বড়োদিদির কাছে প্রতিদিন তার বিদ্যালয়ের কথা শুনতাম আর আমিও মনে মনে অপেক্ষা করতাম সেই অদেখাকে ছুঁয়ে দেখার জন্য। তারপর একদিন শুনলাম আমি বিদ্যালয়ে ভরতি হয়েছি। আমাকেও বিদ্যালয়ে যেতে হবে। শুনে আমার খুব আনন্দ হয়েছিল।

আমি যেদিন প্রথম বিদ্যালয়ে গেলাম সেদিন উত্তেজনার পরিবর্তে এক নতুনের, অজানার ভয় আমাকে ঘিরে ধরেছিল। মা-বাবাকে ছেড়ে কোথাও আমাকে একা থাকতে এই ভয়ে আমি খানিক ভীত ছিলাম। বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেখলাম আমারই মতো আরও অনেক ছেলেমেয়ে সেখানে রয়েছে। কিন্তু অবাক বিষয়, বিদ্যালয়ে পেঁছোনোর পর যেন সেই ভয় কেটে যায়। বরং সেখানে কী হচ্ছে তা বোঝার জন্যই আমি আগ্রহী হয়ে উঠি। আমাদের বিদ্যালয়ের চার-পাঁচ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আমাদের সেদিন প্রথাগত পাঠ দেননি। তার বদলে আমাদের সবাইকে একটি করে রঙিন মোড়কে মোড়া বাক্সে ‘ঠাকুমার ঝুলি’ গল্পের বই দিয়েছিলেন।

যদিও আমরা তখনও পড়তে শিখিনি, তবুও সেই বই ছিল আমাদের অফুরন্ত আনন্দের উৎস। রঙিন মোড়ক থেকে বাক্সের ভিতর থেকে বই বার কার যেন আমাদের সামনের অচেনা জগৎকে ইঙ্গিত করছিল। আমরা তখনও পড়তে শিখিনি, তাই কেবল বই-এর ভিতরের ছবিগুলিই আমাকে আকর্ষণ করেছিল। বিদ্যালয়ের প্রথম দিনের স্মৃতিতে এই ঘটনার কথাই বারবার ফিরে আসে।

উপসংহার

স্মৃতির পটে কত রঙিন ঘটনাই খোচিত হয়ে থাকে। তেমনই একটি আমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা। সেখানে আড়ম্বর নেই। কিন্তু শিক্ষার সূচনায় আমাদের পাওয়া উপহারে শিক্ষার এই চিরকালীন অজানাকে উদ্‌ঘাটনের নেশাকে আবিষ্কার করার যে রঙিন ইঙ্গিত ছিল, তা আজও আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় স্বর্ণখোচিত হয়ে থাকবে।

Leave a Comment