আমার প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র রচনা
আমার প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র রচনা |
ভূমিকা
ভারতবর্ষের পর্যটন কেন্দ্র যেমন বৈচিত্র্যময় তেমনই পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনশিল্পও নানা বিচিত্রতায় ভরপুর। পাহাড়, নদী, সমুদ্র, অরণ্যের অপূর্ব সৌন্দর্যের আকর্ষণে পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। ভ্রমণপিপাসু হিসেবে আমিও বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি। তবে তার মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় হল পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
পুরুলিয়া মূলত মালভূমি অধ্যুষিত এলাকা। সেখানের রুক্ষ প্রাকৃতিক পরিবেশ স্বমহিমায় উজ্জ্বল। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় একটি বিখ্যাত ভ্রমণকেন্দ্র। এই অযোধ্যা পাহাড় অঞ্চলে একদিকে যেমন রয়েছে চড়াই-উতরাই পাহাড়ের বৈশিষ্ট্য তেমনই এখানেই রয়েছে ঝরনা। বসন্তকালে অযোধ্যা পাহাড় পলাশফুলে রক্তিম হয়ে ওঠে। অযোধ্যা পাহাড়ে যাওয়ার পথেই রয়েছে ময়ূর পাহাড়। এই ময়ুর পাহাড়ের লাল মাটির রাস্তার ভরে থাকে পলাশ গাছে। সেই পলাশ ফুল বসন্তের রোদ্দুরে মালভূমির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। ময়ূর পাহাড় ও সংলগ্ন অঞ্চলে বেশ কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস। এই পাহাড় থেকে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চোখে পড়ে।
স্বতন্ত্রতা
পুরুলিয়ার রুক্ষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতই বিচিত্র, যে তা বিভিন্ন ঋতুতে নতুন নতুন রূপে সেজে ওঠে। বসন্তকালে পুরুলিয়ায় পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ পলাশফুল। আবার বর্ষাকালে সেই অঞ্চলেই সবুজ গাছগাছালিতে পার্বত্য বনভূমি ঘন হয়ে ওঠে। এইসময় সরু ঝরনাগুলিও বৃষ্টির জলে উত্তাল হয়ে ওঠে। আবার শীতকালে পুরুলিয়ার আকর্ষণ প্রবল ঠান্ডায় ছৌ উৎসব। সেখানে পুরুলিয়ার দেশীয় শিল্পীরা ছৌ-নৃত্য প্রদর্শন করে। এভাবেই পুরুলিয়া তার স্বতন্ত্র রূপমাহাত্ম্যে পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠে।
দ্রষ্টব্য স্থান
পুরুলিয়ার দ্রষ্টব্য স্থান অনেক। পুরুলিয়ায় অযোধ্যা পাহাড়, পাখি পাহাড়, ময়ূর পাহাড়, ভালো পাহাড়, বামনি ঝরনা, চরিদা গ্রাম দর্শনীয় স্থান হিসেবে প্রসিদ্ধ। অযোধ্যা পাহাড়ের সূর্যাস্ত ছবির মতো সুন্দর। মনে হয় যেন কোনো সুদক্ষ শিল্পী তার নৈপুণ্যে এঁকে দিয়েছেন সেই সৌন্দর্য। পাখি পাহাড়কে ঘিরে রয়েছে এক আশ্চর্য কাহিনি, সেখানে বৃষ্টিপাতের জন্য হয়েছিল বৃক্ষরোপণ। সেই গাছগাছালির টানেই সেখানে এসেছিল অনেক পাখি। তাই এই পাহাড়ের নাম পাখি পাহাড়।
আর আছে বামনি ঝরনা। ঝরনার জলের ঝাপটা পর্যটকদের খুব প্রিয়। বর্ষায় এই বামনি ঝরনা রমণীয় সুন্দর হয়ে ওঠে। আর আছে চরিদা গ্রাম। এই গ্রামের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এখানে মুখোশ তৈরির শিল্পীদের বাস। চরিদার ঘরে ঘরে মুখোশ শিল্পীরা বাস করেন। এই গ্রামের প্রত্যেকটি ঘরের দরজায় সারিবদ্ধভাবে ছৌ-এর মুখোশ সাজানো থাকে। সেই মুখোশের সুনিপুণ শৈল্পিক সৌন্দর্যের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে হয়।