আমার প্রিয় ঋতু রচনা
আমার প্রিয় ঋতু রচনা |
ভূমিকা
বঙ্গপ্রকৃতির মায়াময় বৈচিত্র্যের একটি অঙ্গ হল তার ঋতুবৈচিত্র্য। প্রতিবছরে প্রকৃতি যেন মালায় গাঁথা একটি একটি রত্নের মতো একেকটি ঋতুর সজ্জায় নবরূপে সেজে ওঠে। নব আনন্দের সম্মোহনে জেগে ওঠে সে। রূপে, বৈচিত্র্যে, প্রাণময় উচ্ছলতায় বাংলার সব ঋতুই আমাদের হৃদয়তন্ত্রীকে স্পর্শ করে যায়। কখনও সে আসে রুদ্রের মতো ভয়ঙ্কর উগ্রতায়, কখনও বা তার রূপ সিক্ত, স্নিগ্ধ। আবার কখনও তার আগমন রাজকীয় সৌন্দর্যে। ‘এত রঙ্গে ভরা’ বঙ্গদেশের ঋতুর বিচিত্র সমাহারের মধ্যে আমার প্রিয় ঋতু হল বসন্ত।
বসন্ত প্রকৃতি
বসন্তের রূপ রাজকীয় সৌন্দর্যে মোড়া। শীতের রিক্ততার পরে বসন্ত যেন তার রূপের ডালি নিয়ে হৈ হৈ করে এসে পড়ে। প্রকৃতি হয়ে ওঠে মোহময়ী। গাছের ডালে ডালে নতুন পাতার মর্মরধ্বনি যেন আমাকে শিহরিত করে। আর তার আগমন বার্তা শোনা যায় কোকিলের ডাকে। বসন্তে উদ্দীপ্ত প্রাণের প্রকাশ ঘটে। শীতের সমস্ত জীর্ণতাকে মুছে দিয়ে বসন্তে যেন উদ্দীপ্ত প্রাণের স্ফুরণ ঘটে। বনে বনে শিমুল, পলাশের রক্তিম আলিঙ্গন যেন আপন মাধুর্যে মনোহরণকারী হয়ে ওঠে। প্রকৃতির ব্যাকুল করা এই সৌন্দর্য মনকে উদাস করে দেয়।
বসন্তের স্বাতন্ত্র্য
বসন্তের সময়কাল এমন যে, মনে হয় শীতেরই ফেলে যাওয়া সত্তা বসন্ত। কিন্তু সে তার আপন মহিমায় স্বতন্ত্র। শীতের রিক্ততা বসন্তে নেই, বসন্তে আছে প্রাণের স্ফূর্তি। যৌবনের উদ্দামতায় বসন্ত প্রকৃতি তার পসার সাজিয়ে আবির্ভূত হয়। তার ফুলের সৌন্দর্য যেন আকাশ-বাতাসে নৃত্যের ঝংকারে বেজে ওঠে। তার এই অবারিত উচ্ছ্বাসের একপ্রান্তে রয়েছে শীতের জড়তা অন্যপ্রান্তে গ্রীষ্মের রুদ্র-চন্ডাল অভ্যর্থনা। বসন্তের রূপে যেন শীত ও গ্রীষ্ম সার্থকভাবে সমাহিত হয়ে থাকে।
জীবনের উদ্দীপনা
বসন্তের এই একক সত্তা রাঙিয়ে ওঠে দোলের রঙে। রঙিন হয়ে ওঠে মন। সারাবছরের অবসাদকে ঝেরে ফেলে শুরু হয় নতুনকে বন্দনার প্রস্তুতি। বাংলার আপামর শ্রমজীবী মানুষ ব্যস্ত হয়ে যায় সংবৎসরের ফসল সংগ্রহে। বাঙালির কাছে বসন্ত তাই হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ।