“আমাদের ইতিহাস নেই”-ইতিহাস বলতে কী বোঝায়? ইতিহাস না থাকার মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? |
‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবি সাধারণ মানুষের বিপন্নতার ছবি এঁকেছেন। এই মানুষরা ডানে-বামে কিংবা সামনে-পিছনে কোনো দিকে এগোনোর পথ পাচ্ছে না। তাদের প্রাণপ্রিয় শিশুদের হারিয়ে তারা বারুদ্ধ। এরূপ পরিস্থিতি থেকে তারা এগোতে পারছে না, কারণ তাদের ‘ইতিহাস নেই’। যে জাতির ইতিহাস নেই তারা এগিয়ে যাওয়ার পথও খুঁজে পায় না। কারণ, ইতিহাসের ঐতিহ্য ভবিষ্যৎকে সুদৃঢ় ও সুনিশ্চিত করে তোলে। সাধারণ মানুষকে নানা দিক থেকে আগ্রাসনের জালে যারা আবদ্ধ করে রেখেছে, তারা নিজেদের স্বার্থে সাধারণ মানুষের কর্মের-ঘর্মের ইতিহাস লুকিয়ে রেখেছে কিংবা বিকৃত করে লিখেছে।
ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী সব সময় নিজেদের স্বার্থে নিজেদের গৌরবের ইতিহাস লিখেছে। কিন্তু তাদের সাম্রাজ্য বিজয়, নগর প্রতিষ্ঠা কিংবা চিরন্তন সৌধ নির্মাণের পিছনে যে সাধারণ শ্রমিক-কৃষক জনতা স্তম্ভ রূপে কাজ করে তাদের ইতিহাস সচেতনভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে রেখেছে। তাই প্রথাগত ইতিহাস মানুষকে অন্ধ করে তোলে প্রকৃত ঐতিহ্য সম্পর্কে। সাধারণ মানুষ চাপিয়ে দেওয়া ইতিহাসকে নিজেদের ইতিহাস বলে মেনে নিতে বাধ্য হয়। তাই ওই ইতিহাসে সাধারণ মানুষ খুঁজে পায় না নিজেদের ঐতিহ্যের সন্ধান। ইতিহাস বিচ্ছিন্ন জাতি হল শিকড়হীন। তাই সাধারণ মানুষের যে চোখ-মুখ ঢাকা ইতিহাস তা তাদের বর্তমান বিপন্নতা, অসহায়তা, দিশাহীনতা থেকে উত্তরণের পথ দেখায় না। তাই কবি এই বিপন্ন মানুষদের ইতিহাসের প্রতি সংশয় প্রকাশ করেছেন।