আধুনিক জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার রচনা 400 শব্দে

আধুনিক জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার রচনা

আধুনিক জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার রচনা
আধুনিক জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার রচনা
‘কালো রাতি গেল ঘুচে
আলো তারে দিল মুছে।’
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

ভূমিকা

জীবনের দ্রুত অগ্রগতির অঙ্গনকে আলোক উদ্ভাসিত করে আদিম পশ্চাদপর জীবনের অন্ধকারের অবসান ঘটায় তথ্যপ্রযুক্তি। ‘ইংরেজি ‘Technology’ শব্দটির প্রতিশব্দরূপে বাংলায় ‘প্রযুক্তি’ কথাটি ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানের নীতিগুলির ব্যাবহারিক প্রয়োগ সংক্রান্ত বিদ্যা হল Technology বা প্রযুক্তি। গত শতকের নয়ের দশকে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার মানবজীবনে বিপ্লব ঘটিয়েছে। কৃষিকাজ, আত্মরক্ষা, পশুশিকার, রান্নাবান্না প্রভৃতি ক্ষেত্রে লাঙল ও অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার প্রাচীনকালে মানুষের জীবনে প্রযুক্তির প্রাথমিক সুফল এনে দেয়। আবার প্রাচীনকালের সেইসব স্থূল প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন আজ মানুষকে পৌঁছে দিয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানের যুগে।

আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি

আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা বেশ কঠিন। আধুনিক জীবনের সর্বত্রই রয়েছে প্রযুক্তি। ইলেকট্রিক আলো, পাখা, টেলিভিশন, রেডিয়ো, ফ্রিজ, হিটার, টেলিফোন সবই প্রযুক্তিনির্ভর। ট্রেন, বাস, উড়োজাহাজ, বীজবপন ও ফসল কাটার মেশিন, ফসল ঝাড়াইয়ের মেশিন-প্রযুক্তির অবদান সর্বক্ষেত্রে। আমরা লেখার কাজে যে কলম ও কাগজ ব্যবহার করি, তাও প্রযুক্তি বিজ্ঞানেরই ফসল।

গণমাধ্যম ও প্রযুক্তি

আধুনিক জীবনে গণমাধ্যমের গুরুত্ব অপরিসীম। গণমাধ্যমকে সংবিধানের তৃতীয় স্তম্ভ বলা হয়ে থাকে। এই গণমাধ্যম প্রযুক্তিরই অবদান। সংবাদপত্র, রেডিয়ো, চলচ্চিত্র, দূরদর্শন প্রভৃতি গণমাধ্যমগুলির জন্মের মূলে রয়েছে প্রযুক্তি। এমনকি কোভিড পরিস্থিতিতে গড়ে উঠেছে ওটিটি বিনোদনে খামতি থাকেনি। কেবল জন্ম নয়, তার অগ্রগতির ক্ষেত্রেও প্রযুক্তিকে অস্বীকার করা যায় না। মূলত প্রযুক্তিকে নির্ভর করেই গণমাধ্যমগুলি নিরন্তর আধুনিক হচ্ছে এবং বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। সংবাদপত্র, বেতার সম্প্রচার, দূরদর্শন সম্প্রচার প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিশ্বকে আমাদের হাতের মুঠোর মধ্যে এনে দিয়েছে।

মহাকাশ ও পরমাণু গবেষণায় প্রযুক্তি

আধুনিক মানুষ কেবল পৃথিবী নামক গ্রহের রহস্য অনুসন্ধান করে সন্তুষ্ট নয়। সে মহাবিশ্বের রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে চায়। পারমাণবিক শক্তির সাহায্যে বিশ্বকে করতে চায় সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী। আর আধুনিক মানুষের এই দুর্দমনীয় স্বপ্নপূরণে সহায়তা করে চলেছে প্রযুক্তি বিজ্ঞান। কৃত্রিম উপগ্রহ, চন্দ্র-শুক্র-মঙ্গল গ্রহে অভিযান, মহাকাশ গবেষণা সবই সংঘটিত হচ্ছে প্রযুক্তির সাহায্যে।

কম্পিউটার ও প্রযুক্তি

প্রযুক্তি বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অবদান হল কম্পিউটার। কম্পিউটার বিশ্বকে এনে দিয়েছে আমাদের হাতের মুঠোয়। বহু জটিল সমস্যার সমাধান, নতুন তথ্যানুসন্ধান, নানা অজানা বিষয়কে নিমেষে কম্পিউটার আমাদের চোখের সামনে হাজির করে। প্রযুক্তির জাদুমন্ত্রেই মানুষের মস্তিষ্কের অনুকরণে এমন একটি ব্যাবহারিক প্রয়োগমূলক যন্ত্রের আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে। করোনো পরিস্থিতিতেও যার ফলে কর্মকান্ড সচল থেকেছে।

শিক্ষা ও প্রযুক্তি

আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার অনস্বীকার্য। গতানুগতিক শিক্ষণ ও শিখন পদ্ধতির পরিবর্তে বর্তমানে প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদান অনেক বেশি কার্যকর। কম্পিউটার, মোবাইল, ক্যালকুলেটর প্রভৃতি শিক্ষার্থীদের সহায়ক হয়ে উঠছে। কেবল পাঠ্যসূচির (Syllabus) অন্তর্গত পড়াশোনা নয়, শিক্ষার বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। মহামারির কালেও বিজ্ঞানই অব্যাহত রেখেছে অনলাইন ক্লাস।

প্রযুক্তির মন্দ দিক

জোরালো আলোর পশ্চাতে থাকে তীব্র অন্ধকার। প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও এ কথাটা বেমানান নয়। প্রযুক্তি আধুনিক জীবনের সর্বস্তরে সুফল এনে দিলেও তার মন্দ দিককে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। কম্পিউটার, মোবাইল প্রভৃতির মাধ্যমে কুপ্রভাব পড়ছে আধুনিক জনজীবনে। প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে আধুনিক মারণাস্ত্রের আবিষ্কার মানবকল্যাণের পরিবর্তে মানবজীবনে বহন করে আনছে অভিশাপ।

উপসংহার

আধুনিক জীবন প্রযুক্তি ছাড়া অচল। প্রযুক্তির ভালো ও মন্দ দিক-দুই-ই আছে। তবে প্রযুক্তির আবির্ভাব ও তার প্রয়োগের মূলে রয়েছে মানুষ। ‘বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ’-এ উপলব্ধিও মানুষের। তাই মানুষেরই দায়িত্ব প্রযুক্তিকে মানবকল্যাণের কাজে ব্যবহার করা। প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগই আধুনিক জীবনকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।

Leave a Comment