আঁসিয়া রেজিম’ বলতে কী বোেঝ সংক্ষেপে লেখো। |
‘আঁসিয়া রেজিম’ কথাটির অর্থ হল পুরাতন ব্যবস্থা। অর্থাৎ প্রাক্-বিপ্লব যুগে ফ্রান্স তথা ইউরোপের অধিকাংশ দেশে যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল তাকেই ‘আঁসিয়া রেজিম’ বা ‘পুরাতন ব্যবস্থা’ বলা হয়।
আঁসিয়া রেজিম-এর বৈশিষ্ট্য
(ⅰ) স্বর্গীয় অধিকারবাদের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র। (ii) শ্রেণি বিভক্ত সমাজ ও (iii) গির্জাকেন্দ্রিক জীবন-ছিল আঁসিয়া রেজিম-এর মূল বৈশিষ্ট্য।
স্বৈরাচারী দৈব রাজতন্ত্র
ফ্রান্সের রাজারা দৈব রাজতন্ত্রের ধারণার বিশ্বাসী ছিলেন এবং এই ধারণায় বশবর্তী হয়ে তাঁরা ফ্রান্সে নির্জলা স্বৈরতন্ত্র চালাতেন। ফরাসি রাজারা নিজেদেরকে দেবতার প্রতিনিধি বলে প্রচার করতেন। তাই তাঁরা বলতেন, জনগণের কাছে তাঁরা জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। আসলে নির্বিঘ্নে এবং নিরাপদে শাসন পরিচালনার জন্যই তাঁরা এই দৈব রাজতন্ত্রের ধারণা প্রচার করতেন। চতুর্দশ লুই, পঞ্চদশ লুই ও ষোড়শ লুই ছিলেন। পুরাতনতন্ত্রের ধারক ও বাহক।
শ্রেণিবিভক্ত সমাজ
প্রাক্-বিপ্লব যুগে ফরাসি সমাজ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল-যাজক, অভিজাত ও সাধারণ। যাজক ও অভিজাত শ্রেণি সংখ্যায় নগণ্য হয়েও সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সব সুবিধাটাই পেতেন এবং এরা সরকারকে কোনো প্রকার কর দিত না। অপরদিকে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ (৯৭ শতাংশেরও বেশি) ছিল সুযোগসুবিধাহীন এবং সব রকমের নাগরিক দায়িত্ব পালন করেও সমাজ ও রাষ্ট্রে ছিল অপাঙ্ক্তেয়। উপরন্তু যাজকরা এবং অভিজাতরা এদের কাছ থেকে ‘টাইথ’ এবং ‘করভি’-সহ বিভিন্ন সামন্ত কর আদায় করত।
গির্জাকেন্দ্রিক জীবন
ফ্রান্সের কৃষি জমির ১/৫ অংশ ছিল গির্জার অধীনে। তা সত্ত্বেও তাদেরকে কোনো ভূমিকর দিতে হত না। উপরন্তু জনগণের কাছ থেকে ধর্ম কর, মৃত্যু কর, বিবাহ কর প্রভৃতি আদায় করত। এভাবে সাধারণ শ্রেণি শোষিত হত। শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানের ওপরেও যাজকদের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ছিল।
ফরাসি বিপ্লবের মূল দাবি ছিল পুরাতনতন্ত্রের অবসান এবং এই বিপ্লবের পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে এই ব্যবস্থার অবলুপ্তি ঘটেছিল।