একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা
একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা |
ভূমিকা
ভ্রমণের নেশা মানুষের চিরন্তন। স্থানু হয়ে বসে থাকতে কারোর ভালো লাগে না। শৈশব থেকেই মানুষের মন কল্পনায় ভর করে চলে যায় বহুদূরে। শৈশবের স্বপ্ন বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব করে তুলতে চায় সে। শুরু হয় ভ্রমণের পালা। আমাদের বিদ্যালয়ে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় শিক্ষামূলক ভ্রমণ। বাবা-মায়ের ভ্রমণসঙ্গী হওয়ায় ভ্রমণের নেশা আমাকেও আকৃষ্ট করে। তাই বিদ্যালয় থেকে সুন্দরবনে শিক্ষামূলক ভ্রমণে গিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলাম।
সুন্দরবন যাত্রা
বিদ্যালয় আয়োজিত সুন্দরবন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এখনও পর্যন্ত আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে আছে। সুন্দরবন ভ্রমণের ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আমাদের বিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রবীণ শিক্ষক। লঞ্চে দু-রাত্রি তিন দিন কাটাতে হবে, সুন্দরবনের অজস্র নদীনালা, খাঁড়ি ঘুরে জঙ্গলের ধার ঘেঁষে আমরা যাব সমুদ্রের কাছে বাংলাদেশ সীমান্তে, পথে পড়বে হিংস্র বাঘের আস্তানা, ভয়ংকর কুমিরের আবাস। আদিম জীবনের কাছাকাছি তিন দিন কাটানোর অভিজ্ঞতা খুবই রোমাঞ্চকর হবে, তাতে সন্দেহ নেই।
যাত্রা শুরু
শীতের সময় গরম জামাকাপড়ে শরীর মুড়ে বেশ সকালেই একটি ভ্রমণ সংস্থার বাস ধরে যাত্রা শুরু করলাম সুন্দরবনের উদ্দেশে। ঘণ্টা দুয়েক পর পৌঁছোলাম সুন্দরবন ঢোকার মুখে একটি বড়ো গঞ্জ-বাসন্তীতে। অসংখ্য জেলেনৌকা ও লঞ্চের ভিড়। বাতাসে একটা নোনা গন্ধ। আমরা লঞ্চে উঠে পড়লাম। সমুদ্রের বুক চিরে এগিয়ে চলল আমাদের লঞ্চটি। আগামী তিন দিন আমরা অর্থাৎ ছাত্র-শিক্ষক সবাই প্রাণভরে সুন্দরবনকে দেখব ও চিনব। মাস্টারমশাই ও আমাদের উদ্যোগে সন্ধেবেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হল। গান হল, কবিতাপাঠ হল।
সুন্দরবনের সৌন্দর্য
লঞ্চ চলেছে মাতলা নদী পার হয়ে নেতা ধোপানির ঘাটের দিকে। আমাদের সঙ্গে লঞ্চে একজন গাইড ছিলেন। তিনি লাউডস্পিকারে বিভিন্ন জায়গাগুলির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। শুনলাম এই জায়গার অনেক মানুষ কাঠ ও মধু আনতে গিয়ে বাঘের পেটে গিয়েছে। গা ছমছম করে উঠল। এখানকার নদীতে কেউ নামে না কারণ সেখানে ভয়ংকর হিংস্র কুমিরের বাস। দেখলাম পাড়ে অসংখ্য কুমির রোদ পোহাচ্ছে। সুন্দরবনের গরান, গেঁওয়া ও সুন্দরী গাছ দেখতে দেখতে ক্ষুধা-তৃয়া ভুলে গিয়েছিলাম।
সুন্দরবনের রহস্যময় গভীর জঙ্গলে মন হারিয়ে গিয়েছিল। সজনেখালির কাছে লঞ্চ থামলে অজস্র পাখির কলকাকলি কানে এল। এখানে একটা পাখিরালয় আছে। ঠিক হল পরদিন সেখানে যাওয়া হবে। দেখা হবে বাঘের যাতায়াতের পথ। রাত্রিটা বেশ অনুষ্ঠান, আনন্দ করে মাঝনদীতে লঞ্চে কাটানো হল। পরের দিন সজনেখালির নরম মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপ দেখলাম, অসংখ্য পরিযায়ী পাখি, অনেক হরিণ, বন্য শুয়োর দেখলাম। তার পরদিন গোসাবা, সাতজেলিয়া, সুধন্যপুর হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে গেলাম। এবার এল ফেরার পালা।