১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে কি ‘জাতীয় উত্থান’ বলা যায়

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে কি 'জাতীয় উত্থান' বলা যায়
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে কি ‘জাতীয় উত্থান’ বলা যায়?

ভূমিকা

ভারত ইতিহাসে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ঘটনাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ঐতিহাসিকেরা এই ঘটনাকে সিপাহি বিদ্রোহ বা সামন্ততান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া বা জাতীয় উত্থান বলেছেন। প্রত্যেক বক্তব্যের পিছনে নির্দিষ্ট যুক্তি ও তথ্য আছে।

কারণ

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় উত্থান বলার পিছনে কারণ ও যুক্তিগুলি হল–

গণ অভ্যুত্থান

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহিরা যে বিদ্রোহ শুরু করে তা জনসমর্থন লাভ করে গণ অভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছিল। জনগণ বিদ্রোহী সিপাহিদের সমর্থন করে। তারা চিরাচরিত অস্ত্র (লাঠি, বল্লম, তরোয়াল, তিরধনুক, কুঠার) নিয়ে সরকারি ভবন ও সরকারি কার্যালয় আক্রমণ করে, আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লুঠপাট চালায়। ইংরেজদের আবাসিক এলাকায় তারা একইভাবে আক্রমণ করে এবং হত্যাকাণ্ড চালায়। বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ তখন ইংরেজবিরোধী হয়ে উঠেছিল।

জাতীয় সংগ্রাম

অধ্যাপক সুশোভন সরকার বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বলেছেন, কোনো দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কখনও সেই দেশের আপামর জনগণ অংশগ্রহণ করে না, উদ্দেশ্যের নিরিখে সেই ঘটনাকে বিচার করতে হয়। তাই ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ঘটনাকে তিনি জাতীয় সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন।

নিম্নবর্ণের মানুষের যোগদান:
অধ্যাপক রণজিৎ গুহ বিদ্রোহে নিম্নবর্গের মানুষদের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানের কথা বলেছেন। ড. শশীভূষণ চৌধুরী বিদ্রোহে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, স্থায়িত্বে, ব্যাপকতায়, অভিনবত্বে এই বিদ্রোহ আগের বিদ্রোহগুলিকে অতিক্রম করে যায়।

ঘোষণাসমূহ:
সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের দিল্লি ঘোষণা, আজমগড় ঘোষণায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্য এবং ইংরেজ বিতাড়নের আহ্বান ছিল। ব্রিজেস কাদের-এর ইস্তাহারে ইংরেজমুক্ত ভারত গঠনের কথা ছিল।

মন্তব্য

বিনায়ক দামোদর সাভারকর ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ঘটনাকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলেছেন। কার্ল মার্কসও একই কথা বলেছেন। তারাচাঁদ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ঘটনাকে বিদ্রোহ বলতে অস্বীকার করেছেন। নর্টন, ডাফ, হোমস এই ঘটনাকে ষড়যন্ত্র থেকে উদ্ভূত জাতীয় বিদ্রোহ বলেছেন। উপরোক্ত তথ্য বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য থেকে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ঘটনাকে জাতীয় উত্থান বলা যায়।

Leave a Comment