স্বাধীন ভারত সরকার উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে কী ধরনের উদ্যোগ নেয়

স্বাধীন ভারত সরকার উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে কী ধরনের উদ্যোগ নেয়
স্বাধীন ভারত সরকার উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে কী ধরনের উদ্যোগ নেয়?

ভূমিকা

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের আগে থেকেই উদ্বাস্তু সমস্যার সৃষ্টি হয়। দেশভাগের সময় ও পরে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়। পাকিস্তান থেকে বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু ভারতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য সদ্য স্বাধীন ভারতের উপর প্রবল চাপ পড়ে। তবুও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, পাঞ্জাব ও পশ্চিমবাংলার রাজ্য সরকার এবং আসাম ও ত্রিপুরা সরকার ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ করে উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়।

ভারত সরকারের উদ্যোগ

পাকিস্তান থেকে বিপুল সংখ্যক শিখ ও হিন্দু উদ্বাস্তু ভারতে আশ্রয় নেয়। এই সমস্যা ক্রমে ভয়াবহ রূপ নেয়। এই সমস্যাসমাধানের জন্য ভারত সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। যথা—

ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর

উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ‘পুনর্বাসন নীতি’ ঘোষণা করেন। তাঁর উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকার ‘ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর’ খোলে। উদ্বাস্তু সমস্যাসমাধানের জন্য এই দপ্তর বিভিন্ন প্রকল্প চালু করে।

আশ্রয় শিবির: পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুরা রেলস্টেশন, ফাঁকা জায়গায় থাকতে শুরু করে। সরকারি উদ্যোগে তাদের জন্য আশ্রয় শিবির (অস্থায়ী তাঁবু) তৈরি করা হয়। এই আশ্রয় শিবিরে থাকাকালীন সময়ে উদ্বাস্তুদের সরকারি কার্ড দেওয়া হয়। উদ্বাস্তুদের নাম, পরিচয় নথিভুক্ত করা এবং এখানে সরকারি খরচে উদ্বাস্তুদের খাদ্য সরবরাহ করা হয়। উদ্বাস্তুদের জন্য ছিল উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাও।

গৃহ নির্মাণ: আশ্রয় শিবিরের নথিভুক্ত উদ্বাস্তুদের জন্য আবাসন প্রকল্প অনুযায়ী সরকারি জমিতে আবাসন তৈরি হয়। ফরিদাবাদ, কল্যাণী, দুর্গাপুর, অশোকনগর, সন্তোষপুর প্রভৃতি শহর গড়ে তোলা হয়। আবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে গৃহনির্মাণের জন্য সরকারি অর্থসাহায্য বা ঋণদানও করা হয়। ইন্ডিয়ান কো-অপারেটিভ ইউনিয়ন আবাসন প্রকল্প চালু করে।

কর্মসংস্থান: সরকার নথিভুক্ত উদ্বাস্তুদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে। যারা কারিগরি শ্রমিক ছিলেন তাদের শিল্পকারখানায় নিয়োগ করা হয়। তাদের জন্য নতুন ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প গড়ে তোলা হয়। যারা লেখাপড়া জানতেন, তাদের সরকারি আনুকূল্যে বিভিন্ন সরকারি চাকরি দেওয়া হয়। শিল্প ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কলেজে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু হয়।

ব্যাবসাবাণিজ্যের জন্য উদ্বাস্তুদের কো-অপারেটিভ গঠন করে সরকারি ঋণ দেওয়া হয়। বিভিন্ন বাণিজ্য এলাকা গড়ে তোলে সরকার। জন বিনিময় ও সম্পত্তি বিনিময় ব্যবস্থার দ্বারা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুদের (বিশেষত শিখ) মধ্যে ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যাওয়া মুসলিমদের জমি ও বাড়িগুলি বণ্টন করা হয়।

নাগরিকত্ব দান

নথিভুক্ত উদ্বাস্তুদের ভারত সরকার ভারতীয় নাগরিকত্ব দান করে। তাদের রেশন কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করে।

আন্তঃডোমিনিয়ন সাম্মলন

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরকারি স্তরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল- হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা, দাঙ্গা বাঁধতে না দওয়া, উদ্বাস্তু স্রোত বন্ধ করা ইত্যাদি।

দিল্লি চুক্তি

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে জওহরলাল নেহরু ও লিয়াকৎ আলি খান দিল্লিতে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর বিষয়বস্তু ছিল- সংখ্যালঘুরা নিজ নিজ রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকবে। তারা নিজ সরকারের কাছে সমস্যার প্রতিকার প্রার্থনা করবে। কোনো সংখ্যালঘু দেশত্যাগ করতে চাইলে সরকার আইনগতভাবে সাহায্য করবে।

মন্তব্য

সদ্য স্বাধীন ভারতের কাছে উদ্বাস্তু সমস্যা বিরাট চাপ সৃষ্টি করে। আর্থিক সংকটের জন্য এই ত্রাণ ও পুনর্বাসনের গতি ছিল ধীর।

Leave a Comment