স্বদেশি আন্দোলনে সরলাদেবী চৌধুরাণীর ভূমিকা বিশ্লেষণ করো

স্বদেশি আন্দোলনে সরলাদেবী চৌধুরাণীর ভূমিকা বিশ্লেষণ করো
স্বদেশি আন্দোলনে সরলাদেবী চৌধুরাণীর ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা

বঙ্গভঙ্গবিরোধী বা স্বদেশি আন্দোলন পরিচালনায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে সরলাদেবী চৌধুরাণীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্বদেশি আন্দোলনের সময় বিপ্লববাদ প্রসারেও তাঁর অবদান ছিল।

সরলাদেবী চৌধুরাণীর ভূমিকা

বাংলার রাজনীতির ক্ষেত্রে এবং সংস্কৃতির বিকাশে কলকাতার ঠাকুরবাড়ির বিশিষ্ট অবদান ছিল। এই ধারার সার্থক উত্তরসূরি ছিলেন সরলাদেবী। স্বদেশি আন্দোলনে নানাভাবে তিনি অবদান রেখেছিলেন–

প্রচার: তিনি ‘ভারতী’ পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন। এই পত্রিকার বিভিন্ন নিবন্ধে তিনি স্বদেশি আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে প্রচার করেন। আন্দোলনের আগেও তিনি বাঙালি নারীদের মানসিক ক্ষেত্র গঠনের জন্য বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী নিবন্ধ প্রকাশ করেন।

উৎসব পালন:
তিনি কয়েকটি উৎসবের আয়োজন করেন। যেমন- বীরাষ্টমী ব্রত, প্রতাপাদিত্য উৎসব প্রভৃতি। বাঙালি যুবকদের হীনম্মন্যতা দূর করে আত্মশক্তিতে উদ্দীপিত করাই ছিল এইসব উৎসবের উদ্দেশ্য। বীরাষ্টমী ব্রতের কর্মসূচি ছিল যুবকদের শরীরচর্চা। পুকুরে সাঁতার কাটা, কুস্তি, ব্যায়াম, লাঠিখেলা প্রভৃতি এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর প্রতাপাদিত্য উৎসব ছিল ধর্মের সঙ্গে বীরপূজা। জাতীয় বীরদের সম্বন্ধে প্রবন্ধ পাঠ, বক্তৃতা ইত্যাদি তাদের কর্মসূচির অন্তর্গত ছিল। শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগীকে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়।

বিপ্লববাদ: সরলাদেবী বিপ্লববাদ প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি নিজ বাড়িতে একটি আখড়া খোলেন। এখানে তিনি প্রফেসর মোর্তাজা নামে একজন প্রশিক্ষককে নিয়োগ করেন। তাঁর সাহায্যে বাঙালি ছাত্র-যুবকদের শারীরশিক্ষা ও অস্ত্রশিক্ষার ব্যবস্থা করেন।

‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রতিষ্ঠা: বাংলার বিপ্লববাদ প্রসারই ছিল সরলাদেবীর মূল উদ্দেশ্য। এইজন্য বহু অর্থের প্রয়োজন ছিল। অর্থসংগ্রহের জন্য তিনি ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রতিষ্ঠা করেন। স্বদেশি আন্দোলনের সময় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার স্বদেশি তহবিল হয়ে ওঠে। অনেকে এই তহবিলে অর্থ ও অলংকার দান করেন।

মূল্যায়ন

সরলাদেবী চৌধুরাণী এভাবে একক প্রচেষ্টায় স্বদেশি আন্দোলনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। তাঁর এই তৎপরতায় কলকাতার নারীসমাজ ও ছাত্রসমাজ স্বদেশি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

Leave a Comment