‘সারারাত তবু দাঁড় টানি’- কবি সারারাত দাঁড় টানেন কেন? ‘তবু’ কথাটি বলার কারণ কী? এই দাঁড় টানার মধ্য দিয়ে কবির কোন্ মানসিকতা ফুটে উঠেছে? |
দাঁড় টানার কারণ
‘তবু কথাটি বলার কারণ
তরি ভরা পণ্য নিয়ে কবি পাড়ি দিতে চান সাত সাগরের পারে। গতানুগতিক জীবনের সীমা পেরিয়ে এক স্বপ্নকল্পনাময় জগতে তিনি বিচরণ করতে চান। অথচ তাঁর তরি তটের কিনারে নোঙরে বাঁধা পড়ে গেছে। বাস্তবজীবনের মায়াবন্ধন তিনি অতিক্রম করতে পারছেন না। বৃথা জেনেও কবি চেষ্টা করে চলেছেন বন্ধনমুক্ত হবার। দাঁড় টানছেন অবিরাম, মাস্তুলে পাল বাঁধছেন আর তারার পানে চেয়ে দিক নির্ণয় করছেন। এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর জীবনতরি সুদূরের লক্ষ্যে এগোতে পারছে না। এই কারণেই কবি ‘তবু’ কথাটি বলেছেন।
কবির মানসিকতা
প্রবাদে বলে বৃথা আশা নাকি অনিঃশেষ। আশা মরতে মরতেও মরে না। রোমান্টিক কবি অজিত দত্ত চরম আশাবাদী। ব্যর্থতার নৈরাশ্য তাঁকে গ্রাস করতে চাইলেও তিনি বিষন্ন মনে জীবনব্যাপী গন্তব্যে পৌঁছোনোর চেষ্টা চালিয়ে যান। অপ্রাপনীয়কে পাওয়ার আশা কবি ত্যাগ করতে পারেন না। তটের কিনারে নোঙর পড়ে গেছে, সপ্তসিন্ধুপারে পাড়ি দেওয়া হয়তো এ জীবনে সম্ভব হবে না। কিন্তু এই পরাজয়কে নিষ্ক্রিয়ভাবে মেনে নেওয়া রোমান্টিক মানুষের ধর্ম নয়। কবি এই অসহায়তাকে অতিক্রম করার জন্য সারারাত দাঁড় টেনে চলেছেন। সারারাত বলতে বোঝানো হয়েছে সারাজীবন। এই দাঁড় টানার মধ্য দিয়ে কবির রোমান্টিক মানসিকতা ফুটে উঠেছে। চির-অতৃপ্ত, চিরচঞ্চল কবিমন বাস্তবের সীমানা ছাড়িয়ে এক উন্মুক্ত স্বপ্নলোকে পৌঁছোবেন বলে আশা করেন।