সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীরা কী ধরনের ভূমিকা পালন করে

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীরা কী ধরনের ভূমিকা পালন করে – বিপ্লববাদ প্রচারে নারীরাও এগিয়ে আসেন। সরলাদেবী চৌধুরাণী স্বদেশি যুগে যুবক-যুবতীদের নানারকম অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণের জন্য নিজ বাড়িতে একটি আখড়া খোলেন। ভগিনী নিবেদিতার নামও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
 
তো চলুন আজকের মূল বিষয় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীরা কী ধরনের ভূমিকা পালন করে পড়ে নেওয়া যাক।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীরা কী ধরনের ভূমিকা পালন করে

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো

ভূমিকা

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড কার্জন ‘বঙ্গভঙ্গ’ করেন। এর প্রতিবাদে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে এই আন্দোলন নিয়মতান্ত্রিক পথে পরিচালিত হয়। এই পথে কোনো প্রতিকার না পেয়ে বাঙালি যুবসমাজ হতাশ হয়ে পড়ে। তখন তারা দাবি আদায়ের জন্য অস্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। এই সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীরাও অংশগ্রহণ করে।

বিপ্লববাদ প্রচার

বিপ্লববাদ প্রচারে নারীরাও এগিয়ে আসেন। সরলাদেবী চৌধুরাণী স্বদেশি যুগে যুবক-যুবতীদের নানারকম অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণের জন্য নিজ বাড়িতে একটি আখড়া খোলেন। ভগিনী নিবেদিতার নামও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। বিংশ শতকে বীণা দাস, কল্পনা দত্ত, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রমুখ সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

বিশিষ্ট নারীদের ভূমিকা

ভগিনী নিবেদিতা

বাংলায় বিপ্লববাদ প্রচারে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন ভগিনী নিবেদিতা। তিনি অনুশীলন সমিতিকে (বিপ্লবী সমিতি) ম্যাৎসিনির জীবনীগ্রন্থ উপহার দেন। এই গ্রন্থ থেকে বিপ্লবীরা গেরিলা যুদ্ধপদ্ধতি সম্বন্ধে ধারণা লাভ করে। এ ছাড়া ক্রপটকিন-এর লেখা ‘বিপ্লবীর আত্মকথা’ এবং ‘রুশ ও ফরাসি কারাগার’ গ্রন্থ দুটি বিপ্লবী ভূপেন্দ্রনাথ দত্তকে উপহার দেন নিবেদিতা। বিপ্লবী গ্রন্থ দেওয়া ছাড়াও তিনি বিভিন্নভাবে অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দলকে সাহায্য করেন।

লীলা নাগ ও দীপালি সংঘ

বিপ্লবী নারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লীলা নাগ। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর উদ্যোগে দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি দীপালি ছাত্রী সংঘ নামে ভারতের প্রথম ছাত্রীসংগঠনটি তৈরি করেন। বিপ্লবী অনিল রায়ের সংস্পর্শে এসে তিনি বিপ্লবী সমিতি শ্রীসংঘ-এ যোগ দেন।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে প্রথম মহিলা শহিদ। সূর্য সেনের সংস্পর্শে তিনি সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন। মাস্টারদা সূর্য সেন তাঁকে চট্টগ্রামের পাহাড়তলিতে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব দেন। পরিকল্পনামতো ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর এই তরুণী ৭ জন বিপ্লবীর একটি দল নিয়ে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন। পুলিশের সঙ্গে গুলিবিনিময়ে তিনি আহত হন। তবে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে তিনি পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

কল্পনা দত্ত

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের খাস্তগীর হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পরেই কল্পনা দত্ত চট্টগ্রাম বিপ্লবী দলে যোগ দেন। যখন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পরিকল্পনা স্থির হয়, তখন তাকে মাটির তলায় রাখা ডিনামাইটের সঙ্গে বৈদ্যুতিন সংযোগ করানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কল্পনা দত্ত গ্রেফতার হন এবং বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

কার্যকলাপ

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার নারীরা বিভিন্নভাবে অংশগ্রহণ করেন- কখনও বিপ্লবীদের আশ্রয়দান, কখনও বিপ্লবীদের অস্ত্র সঞ্চয় ও সরবরাহ করা, আবার কখনও সক্রিয়ভাবে বিপ্লবী কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করা প্রভৃতি।

কুমিল্লার মনোরমা দেবী, মৃণালিনী দেবী ও হেমপ্রভা দেবী নিজেদের বাড়িতে অস্ত্র মজুত করেন, বিপ্লবীদের আশ্রয়দান করেন। ঢাকার ব্রহ্মময়ী সেন, বীরভূমের দুকড়িবালা দেবী” নিজ নিজ এলাকায় অনুরূপ কাজ করতেন। এভাবে বাংলার নারীরা বিপ্লবী আন্দোলনে পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বীণা দাস নামে ডায়োসেশান কলেজের ছাত্রী বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করেন। ফলে তিনি গ্রেফতার হন এবং বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। শান্তি ও সুনীতি নামে কুমিল্লার দুই স্কুলছাত্রী কুমিল্লার জেলাশাসক স্টিভেনসকে গুলি করে হত্যা করেন

মূল্যায়ন

এভাবে পারিবারিক ও সামাজিক বাধা দূর করে সীমিতভাবে হলেও বাংলার নারীরা সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীরা কী ধরনের ভূমিকা পালন করে -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Comment