সম্পদের কার্যকারিতা তত্ত্ব বলতে কী বোঝো |
বিংশ শতকের তিরিশের দশকে অধ্যাপক জিমারম্যান সম্পদের কার্যকারিতা তত্ত্বের অবতারণা করেন। তাঁর মতে, কোনো বস্তু বা পদার্থের কার্যকারিতাই হল সম্পদ। অর্থাৎ, কার্যকরী গুণ বা অভাব পূরণের ক্ষমতার ভিত্তিতে কোনো বস্তুর সম্পদে পরিণত হওয়ার তত্ত্বকে সম্পদের কার্যকারিতা তত্ত্ব বলে।
তত্ত্বের মূলকথা :
জিমারম্যানের কার্যকারিতা তত্ত্ব অনুসারে –
(ক) সম্পদ ও কার্যকারিতার সম্পর্ক হল–
বস্তু + কার্যকারিতা = সম্পদ, যেমন – কয়লা, খনিজ তেল প্রভৃতি।
অবস্তু + কার্যকারিতা = সম্পদ, যেমন – শিক্ষা, কর্মদক্ষতা, জ্ঞান প্রভৃতি।
বস্তু – কার্যকারিতা = সম্পদ নয়, যেমন পতিত জমি, দূষিত বাতাস প্রভৃতি।
অবস্তু – কার্যকারিতা = সম্পদ নয়, যেমন – কুসংস্কার, বর্ণবৈষম্য প্রভৃতি।
সম্পদ – কার্যকারিতা = সম্পদ নয়, যেমন – ভূমিক্ষয়, অনুর্বর কৃষিজমি প্রভৃতি।
(খ) মানবিক গুণ, যেমন মানুষের শ্রম, দক্ষতা, জ্ঞান, বুদ্ধি ইত্যাদি সম্পদের কার্যকারিতা বাড়ায়। সংস্কৃতির কার্যকরী ক্ষমতা আছে, তাই সংস্কৃতিও সম্পদ। কার্যকারিতা আছে বলে সম্পদ গতিশীল প্রকৃতির। চাহিদা, প্রশাসনিক দক্ষতা সম্পদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
সম্পদের কার্যকারিতার পর্যায় :
সম্পদের কার্যকারিতা চারটি পর্বে বিভক্ত। যথা- (i) প্রথম পর্যায় – এই পর্যায়ে সম্পদ প্রকৃতির দান এবং সর্বত্র সম্পদের কার্যকারিতা সমান। (ii) দ্বিতীয় পর্যায় – এই পর্যায়ে মানুষ তার দৈহিক শ্রমের দ্বারা সম্পদ আহরণ করে এবং সম্পদের কার্যকারিতা প্রথম পর্বের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পায়। (iii) তৃতীয় পর্যায় – মানুষ এই পর্যায়ে নিজের শ্রম ও উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পদের কার্যকারিতাকে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে দেয়। (iv) চতুর্থ পর্যায় – এই পর্যায়ে অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য গচ্ছিত সম্পদ প্রায় নিঃশেষিত হতে থাকে এবং সম্পদের ক্রমহ্রাসমান কার্যকারিতা লক্ষ করা যায়।
সম্পদের কার্যকারিতার নিয়ন্ত্রক :
সম্পদের কার্যকারিতা চারটি বিষয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যথা–
• চাহিদা :
মানুষের উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধির ফলে সম্পদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, চাহিদা নিবারণের জন্য মানুষ সম্পদের কার্যকারিতাকে বহুমুখী করে তোলে। যেমন পূর্বে খনিজ তেল শুধুমাত্র জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হত, কিন্তু বর্তমানে খনিজ তেলের অসংখ্য উপজাত দ্রব্য নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়।
• প্রযুক্তি:
মানুষের প্রযুক্তি ও কারিগরি বিদ্যার উৎকর্ষতা যত বৃদ্ধি পাবে সম্পদের কার্যকারিতাও তত বৃদ্ধি পাবে। যেমন – কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ায়।
• সময় :
প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিচার করলে বোঝা যাবে সম্পদের কার্যকারিতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। যেমন – কারিগরি বিদ্যার উন্নতির ফলে দুর্গম অঞ্চল থেকেও খনিজ সম্পদ আহরণ করা যাবে।
• স্থান :
সম্পদের প্রাপ্তিস্থানের ওপর তার কার্যকারিতা নির্ভর করে। যেমন – সূর্যালোকের কার্যকারিতা সর্বত্রই বিরাজমান।
পরিশেষে, সম্পদের কার্যকারিতা তত্ত্বের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, কার্যকারিতা হল সম্পদের প্রাণশক্তি, যা ছাড়া সম্পদ অস্তিত্বহীন। সম্পদের এই কার্যকারিতা সর্বদা গতিশীল এবং পরিবর্তনশীল।