সকাল হইতে সন্ধ্যার ব্যঞ্জনা
‘চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘খেয়া’ কবিতার প্রায় প্রথমদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সকাল ও সন্ধ্যার উল্লেখ করেছেন। এই দুই বেলা নদীপারের গ্রাম দুটিতে একইসঙ্গে আনাগোনা করে; দিনের প্রারম্ভ আর দিনের পরিসমাপ্তি ঘোষণাবার্তা নিয়ে আসে। গভীরতর ব্যঞ্জনায় দিবস আসলে জীবনকে বোঝায়, সেখানে ‘সকাল’ হল মানবজীবনের শুরু আর ‘সন্ধ্যা’ সেই জীবনের অন্তিম লগ্নকে স্পষ্ট করে-তাই শব্দ দুটি গভীর ব্যঞ্জনায় অভিষিক্ত।
‘দুই গ্রাম’-এর ব্যঞ্জনা
রোমান্টিক কবি তাঁর অন্তর্দৃষ্টিকে অতীত-বর্তমান- ভবিষ্যতের পানে প্রসারিত করে মানবের জীবনপ্রবাহকে উপলব্ধি করতে চেয়েছেন। উদাসী কবির সম্মুখে প্রসারিত নদীস্রোত, এপার-ওপারে দুখানি সাধারণ গ্রাম-তারই মাঝে যাত্রীদল নিয়ে খেয়াতরি চলমান। দুটি গ্রাম পরস্পরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, যেন তারা বহু যুগের চেনাজানা। যাত্রীরা কেউ ঘরে ফিরেছে, কেউ বা ঘর থেকে বাইরে গেছে বেরিয়ে। তাদের আসা-যাওয়া চলেছে নিরন্তর। আসলে নবীনরা সেখানে আসে; প্রবীণরা যায় ফিরে-সেই অনিবার্য আবাসস্থলের ইঙ্গিত নিয়ে হাজির হয়েছে ‘দোঁহা পানে’ চেয়ে থাকা গ্রাম দুটি। নদীতটে একাকী উদাসী কবি মানবের এই অনন্ত আসা-যাওয়ার অর্থ শেষত খুঁজে পেয়েছেন–
“এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে-
কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে।।”