শত দিবসের রাজত্ব
|
1813 খ্রিস্টাব্দে লাইপজিগ বা জাতিসমূহের যুদ্ধে (15 অক্টোবর-17 অক্টোবর) পরাজিত হলে একদা ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ানকে ফ্রান্স ও ইটালির মধ্যবর্তী ভূমধ্যসাগরের উত্তরে অবস্থিত এলবা দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয়। 20 মার্চ, 1815 খ্রিস্টাব্দে তিনি আবার ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন ও ৪ জুলাই, 1815 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। এই রাজত্বকাল ফ্রান্স তথা ইউরোপের ইতিহাসে একশত দিবসের রাজত্ব নামে প্রসিদ্ধ।
ফ্রান্সে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি
পরাজিত নেপোলিয়ান সিংহাসন ও রাজ্যচ্যুত হয়ে এলবা দ্বীপে নির্বাসিত হওয়ার পরবর্তীকালে বুরবোঁ বংশীয় রাজা অষ্টাদশ লুই ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেছিলেন। সেই সুবাদে তাঁর রাজত্বকালে যাঁরা নেপোলিয়ানের আমলে দেশত্যাগী হয়েছিলেন তাঁরা ফিরে আসেন ও পুনরায় নিজেদের পুরোনো সম্পত্তিসহ ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। ফলে ফ্রান্সে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং ফরাসি রাজা অষ্টাদশ লুই জনগণের সমর্থন হারাতে থাকেন।
ভিয়েনা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ইউরোপীয় নেতৃবর্গের মধ্যে মতবিরোধ ঘটে ও তারা প্রাক্-বিপ্লব অবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রতি উৎসাহ দেখাতে থাকেন।
নেপোলিয়ানের প্রত্যাবর্তন
এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে নেপোলিয়ান 1050 জন সৈন্য নিয়ে ফ্রান্স অভিমুখে যাত্রা করেন ও 1815 খ্রিস্টাব্দের ২ মার্চ ফ্রান্সের কান শহরে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি রাজধানী প্যারিসের অভিমুখে অগ্রসর হতে থাকলে তাঁকে প্রতিরোধ করার জন্য যে সেনাবাহিনীকে পাঠানো হয় সেই সেনাবাহিনী নেপোলিয়ানের পক্ষ অবলম্বন করে এবং নেপোলিয়ান সহজেই লিয় নগরীতে প্রবেশ করে নিজেকে ফ্রান্সের সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন (1815 খ্রিস্টাব্দের 20 মার্চ থেকে 27 মার্চের মধ্যে)।
মিত্রপক্ষের প্রতিক্রিয়া
নেপোলিয়ান ফ্রান্সে ফিরে এসে পুনরায় সম্মানের সঙ্গে সম্রাটের আসনে আরোহণ করলে মিত্রপক্ষ জোটবদ্ধ হয় এবং নির্বাসিত হিসেবে বিবেচিত নেপোলিয়ানের সিংহাসনের অধিকার প্রক্রিয়াকে আইনবিরুদ্ধ বলে দাবি করে।
ওয়াটারলুর যুদ্ধ
1815 খ্রিস্টাব্দের 18 জুন ওয়াটারলুর যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাপতি ডিউক অফ ওয়েলিংটন এবং প্রাশিয়ার সেনাপতি গুস্কার কাছে শেষ পর্যন্ত নেপোলিয়ান পরাজিত হন।
নির্বাসনদণ্ড ও মৃত্যু
নেপোলিয়ান পরাজিত হলে তাঁকে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে চির নির্বাসনে পাঠানো হয়। 1821 খ্রিস্টাব্দে 5 মে এখানেই নেপোলিয়ানের মৃত্য হয়।