রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার স্বরূপ কী ছিল

রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার স্বরূপ কী ছিল
রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার স্বরূপ কী ছিল?

ভূমিকা

বাংলাদেশে ইংরেজ রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বেসরকারি ও সরকারি উদ্যোগে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে। দেশজ শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত থাকলেও অর্থ উপার্জনের সুবিধা থাকায় পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ও প্রসারিত হয়। এই শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন ত্রুটি ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে পাশ্চাত্য তথা ঔপনিবেশিক শিক্ষার বিরোধিতা করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টিতে ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার স্বরূপ

সীমাবদ্ধতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার বিপদ সম্বন্ধে দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেন যে, শহরের মানুষের একাংশ এই শিক্ষার সুযোগ পায় বলে তারাই মান, অর্থ অর্জন করে সমাজের শ্রেষ্ঠ শ্রেণির পর্যায়ে উন্নীত হয় আর তাদের পিছনে অন্ধকারে নিমগ্ন থাকে সারা দেশ। ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে পুথিগত বিদ্যাবুদ্ধির সংকীর্ণতার ফলে তারা শুধুমাত্র শিক্ষিত সমাজকেই দেশ বলে বিবেচনা করে। আর তার ফলে ভারতের অবহেলিত গ্রামগুলি যাবতীয় অসুবিধা আর সমস্যার সম্মুখীন হয়। শিক্ষার হেরফের ঔপনিবেশিক শিক্ষাকে কটাক্ষ করেছেন (১৮৯৩ খ্রি.) প্রবন্ধে তিনি বলেন যে, বিদেশি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা পাশ্চাত্যের প্রগতিশীল চিন্তাধারা আত্মস্থ করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। শিক্ষার ফল মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির মধ্যে সীমিত থাকে।

যান্ত্রিকতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, এই ধরনের শিক্ষা শিশুর উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশের বদলে শিশুকে নিষ্ক্রিয় যন্ত্রে পরিণত করে। একজন শিশুকে যদি তার মাতৃভাষায় স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ না দিয়ে বিদেশি ভাষা রপ্ত করার কাজে জোর দেওয়া হয়, তাহলে শিশুর সহজাত জ্ঞান অর্জনের বিষয়টি ক্ষুণ্ণ হয়। শিশু তথা শিক্ষার্থী তখন যান্ত্রিক হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্কুলজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, তাঁরা জড়পদার্থের মতো বসে থাকতেন জাদুঘরের মৃত সামগ্রীর ন্যায় এবং তাঁদের উপর শিক্ষকদের শিক্ষার বা পাঠের বিষয়বস্তু কার্যত ছুঁড়ে দেওয়া হত।

জ্ঞানভিক্ষা

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, ঔপনিবেশিক শিক্ষাকাঠামোয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি কার্যত জ্ঞানভিক্ষার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি জাতীয় মর্যাদাবোধকে ক্ষুণ্ণ করে। কারণ- এগুলি পাশ্চাত্যের আদর্শ অনুসরণ, ধার করা বিদ্যার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। তাঁর মতে, অন্ধ অনুকরণ না করে সমন্বয় করা উচিত। তিনি স্বদেশি সমাজ (১৯০৪ খ্রি.) শীর্ষক বক্তৃতায় মেলা, যাত্রা, কথকতা প্রভৃতি দেশজ জনপ্রিয় মাধ্যমগুলিকে শিক্ষাদানের কাজে ব্যবহার করার উপর গুরুত্ব দেন।

মূল্যায়ন

রবীন্দ্রনাথ বুঝতে পেরেছিলেন, ইংরেজ প্রবর্তিত – শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষের চারিত্রিক বলিষ্ঠতা, মনের প্রসারতা ও বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। তাই তিনি ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

Leave a Comment