মহীখাত তত্ত্বের (Geosyncline Theory) ভিত্তিতে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি আলোচনা করো |
মহীখাত তত্ত্বের ভিত্তিতে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি:
জার্মান ভূবিজ্ঞানী কোবারের (Kober, 1925) মহীখাত বা জিওসিনক্লাইন তত্ত্ব অনুসারে, বর্তমানে যে-সব স্থানে ভঙ্গিল পর্বত অবস্থান করছে, অতীতে সেখানে সংকীর্ণ, দীর্ঘ ও অগভীর সমুদ্র ছিল, যাকে মহীখাত বলে। এই মহীখাত থেকে তিনটি পর্যায়ে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি ঘটে।
• শিলায়ন বা লিখোজেনেসিস (Lithogenesis): এই পর্যায়ে, মহীখাতের পাশের ভূখণ্ডের ক্ষয়জাত পদার্থ প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা বাহিত হয়ে মহীখাতে সঞ্চিত হতে থাকে এবং কালক্রমে উপরের চাপ ও নীচের তাপে পাললিক শিলায় পরিণত হয়।
• গিরিজনি পর্যায় বা ওরোজেনেসিস (Orogenesis) এই পর্যায়ে, কালক্রমে সঞ্চিত পাললিক শিলার ভারে মহীখাতের তলদেশ দীরে ধীরে নীচের দিকে নামতে থাকে। এর ফলে সৃষ্ট টানের কারণে পাশের ভূখণ্ড দুটি পরস্পরের দিকে আসতে থাকে, যার জন্য দুই ভূখণ্ডের প্রবল পার্শ্বচাপে মহীখাতের পাললিক শিলাস্তর ভাঁজ খেয়ে উপরে উঠে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি করে।
• ভাস্কর্য পর্যায় বা লিপ্টোজেনেসিস (Glyptogenesis): এই পর্যায়ে ভঙ্গিল পর্বতের উত্থান কার্য এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির (নদী, হিমবাহ) দ্বারা ক্ষয়কার্যের ফলে নানারূপ ভূমি ভাস্কর্যের সৃষ্টি হতে থাকে।
উদাহরণ : বর্তমানে যেখানে হিমালয় রয়েছে অতীতে সেখানে ‘টেথিস’ নামে এক অগভীর সমুদ্র বা মহীখাত ছিল। এর উত্তরে আঙ্গারাল্যান্ড ও দক্ষিণে গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামে দুটি প্রাচীন ভূখণ্ড ছিল। এই দুই ভূখণ্ড থেকে দীর্ঘকাল ধরে ক্ষয়জাত পদার্থ টেথিসে সঞ্চিত হতে থাকে। কালক্রমে, পলিরাশির চাপে গিরিজনি আলোড়ন শুরু হলে ভূখণ্ড দুটির প্রবল পার্শ্বচাপে টেথিসের তলদেশে সঞ্চিত পাললিক শিলা ভাঁজ খেয়ে উপরে উঠে হিমালয় পর্বত গঠন করেছে।