মহারানির ঘোষণাপত্রের (১৮৫৮ খ্রি.) ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী

মহারানির ঘোষণাপত্রের (১৮৫৮ খ্রি.) ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী
মহারানির ঘোষণাপত্রের (১৮৫৮ খ্রি.) ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর এলাহাবাদের দরবারে লর্ড ক্যানিং ‘মহারানির ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন। ওই বছরেই ২ আগস্ট ভারত শাসন আইনের দ্বারা কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে এবং মহারানি ভিক্টোরিয়া সরাসরি ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। গভর্নর জেনারেলের পরিবর্তে ভাইসরয় পদ তৈরি হয়। স্বত্ববিলোপ নীতির অবসান, দেশীয় রাজ্যগুলির অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ, প্রত্যেক ভারতীয়কে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান, যোগ্যতা অনুযায়ী ভারতীয়দের সরকারি চাকরিপ্রদান প্রভৃতি আশ্বাসবাণী উচ্চারিত হয় এই ঘোষণাপত্রে।

তাৎপর্য

কিন্তু ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একশো বছরের অপশাসনে সৃষ্ট গভীর ক্ষতে প্রলেপ দিতে গিয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হলেও তা সঠিকভাবে পালিত হয়নি। প্রথমত, এই ঘোষণাপত্রের দ্বারা ব্রিটিশ সরকার বিদ্রোহের কারণগুলি অনুধাবন করে সেগুলির প্রতিকারের চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয়ত, দেশীয় রাজন্যবর্গকে স্বশাসনের অধিকার দেওয়া হলেও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিরোধে ভাইসরয়ের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত বলে ঘোষণা করা হয়। তৃতীয়ত, এই ঘোষণাপত্রের দ্বারা সামন্ততান্ত্রিক দেশীয় রাজন্যবর্গ ও ভূস্বামী শ্রেণির আনুগত্যের উপরই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, শিক্ষিত শ্রেণির দাবিদাওয়াকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। চতুর্থত, এই ঘোষণাপত্রের দ্বারা পুরোনো সাম্রাজ্যবাদী শাসনের মূল চরিত্রের কোনো বদল ঘটেনি, পরিবর্তন ঘটেছিল কেবল বহিরঙ্গেই।

এই সকল কারণে ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার এই ঘোষণাপত্রকে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অধ্যায়ের সূচনাকাল বলে চিহ্নিত করেছেন। বিপানচন্দ্রও এই ঘোষণাপত্রকে ‘রাজনৈতিক ধাপ্পা’ বলেছেন।

FAQs On – মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী

মহারানীর ঘোষণা পত্র কবে জারি করা হয়?

মহারানীর ঘোষণা পত্র জারি করা হয় ১ লা নভেম্বর, ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ।

মহারানীর ঘোষণা পত্র কোথায় পাঠ করা হয়?

মহারানীর ঘোষণা পত্র পাঠ করা হয় ভারতের এলাহাবাদে।

মহারানীর ঘোষণা পত্র কে পাঠ করেন?

মহারানীর ঘোষণা পত্র পাঠ করেন লর্ড ক্যানিং।

মহারানীর ঘোষণাপত্র কী ?

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়া ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটান এবং নিজের হাতে তুলে নেন ভারতের শাসনভার। তার প্রতিনিধিরূপে ভারতের প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং আনুষ্ঠানিকভাবে যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন তা ‘মহারানীর ঘোষণাপত্র’ নামে পরিচিত।

Leave a Comment