ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থানের অবস্থান কীভাবে নির্ণয় করা হয়

ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থানের অবস্থান কীভাবে নির্ণয় করা হয়
ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থানের অবস্থান কীভাবে নির্ণয় করা হয়
পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো অঞ্চল, স্থান বা বস্তু যেখানে আছে সেটাই হল তার অবস্থান। এই অবস্থান সঠিকভাবে নির্ণয় করার পদ্ধতিগুলি হল–
(A) সমতল পৃষ্ঠের ওপর আপেক্ষিক অবস্থান নির্ণয়।
(B) গোলাকার ভূ-পৃষ্ঠের ওপর প্রকৃত অবস্থান নির্ণয়।

(A) পৃথিবীপৃষ্ঠে বা ভূপৃষ্ঠের উপর অবস্থিত কোলো স্থালের অবস্থান নির্ণয়ের পদ্ধতিগুলি হল:

একটি স্থান বা বস্তুর সাপেক্ষে আর একটি স্থান বা বস্তুর অবস্থান নির্ণয় হল আপেক্ষিক অবস্থান। দুটি উপায়ে আপেক্ষিক অবস্থান নির্ণয় করা হয়। যথা –

(ক) আয়তাকার স্থানাঙ্ক (Rectangular Co-ordinate) : 

ধরা যাক, সুবিশাল মাঠের B স্থানে একটি বটগাছ আছে। A স্থানের সাপেক্ষে বটগাছটির অবস্থান নির্ণয় করতে হবে। প্রদত্ত চিত্রে B স্থানের অবস্থান A স্থানের সাপেক্ষে আয়তাকার স্থানাঙ্কের মাধ্যমে নির্ণয় করে বলা যায়, বটগাছটি (B) A স্থান থেকে 200 মিটার পূর্বে এবং 200 মিটার উত্তরে অবস্থান করছে। এই পদ্ধতি কার্তেসিয় স্থানাঙ্ক (Cartesian Co-ordinate) নামে পরিচিত।

(খ) মেরু স্থানাঙ্ক (Polar Co-ordinate) : 

আবার বট গাছের এই অবস্থান A বিন্দুর সাপেক্ষে কোণ ও দূরত্বের মাধ্যমেও নির্ণয় করা যায়। একে মেরু স্থানাঙ্ক বলে। মেরু স্থানাঙ্ক অনুসারে B স্থান বা বট গাছের অবস্থান A স্থানের উত্তর-পূর্বে 45° কোণে 283 মিটার দূরত্বে হবে। এই অবস্থান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রিসমেটিক কম্পাস ও থিওডোলাইট নামে দুটি যন্ত্রের প্রয়োজন হয়।

(B) গোলাকার ভূ-পৃষ্ঠের ওপর প্রকৃত ভাবস্থান নির্ণয় : 

সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে সহজ ও নির্ভুলভাবে গোলাকার ভূ-পৃষ্ঠের ওপর কোনো স্থান বা বস্তুর প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় করা যায়। যথা–

(ক) ভূ-জালকের সাহায্যে অবস্থান নির্ণয় : 

গোলীয় পৃথিবী-পৃষ্ঠের কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় করতে পূর্ব-পশ্চিমে কল্পিত বৃত্তাকার অক্ষরেখা ও উত্তর-দক্ষিণে কল্পিত অর্ধবৃত্তাকার দ্রাঘিমারেখার সাহায্য নেওয়া হয়। অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখাগুলি পরস্পর সমকোণে (90°) মিলিত হয়ে ভূ-জালকের সৃষ্টি করেছে। এই জালকের অক্ষরেখার মানের সাহায্যে জানা যায় কোনো স্থান নিরক্ষরেখা থেকে কতটা উত্তরে বা দক্ষিণে অবস্থিত এবং দ্রাঘিমারেখার মানের সাহায্যে জানা যায় কোনো স্থান মূলমধ্যরেখা থেকে কতটা পূর্বে বা পশ্চিমে অবস্থিত।
এই পদ্ধতিতে দুটি উপায়ে অবস্থান নির্ণয় করা হয়। যথা—
• স্বল্প পরিসরে বিস্তৃত স্থানের অবস্থান নির্ণয়। যেমন কলকাতা 22°34′ উত্তর অক্ষরেখা ও 88°24′ পূর্ব দ্রাঘিমারেখার ছেদবিন্দুতে অবস্থিত। অর্থাৎ, কলকাতা নিরক্ষরেখা থেকে 22°34′ উত্তরে এবং মূলমধ্যরেখা থেকে 88°24′ পূর্বে অবস্থিত।
• বিস্তৃত অঞ্চলের অবস্থান নির্ণয়। যেমন ভারতের অবস্থান হল 8°4′ উত্তর অক্ষরেখা থেকে 37°6′ উত্তর অক্ষরেখা এবং 68°7′ পূর্ব দ্রাঘিমারেখা থেকে 97°25′ পূর্ব দ্রাঘিমারেখার মধ্যে।

(খ) GPS পদ্ধতিতে অবস্থান নির্ণয় : 

বর্তমানে অত্যাধুনিক উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে মহাকাশে প্রেরিত কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে পৃথিবীপৃষ্ঠের যে-কোনো স্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা নির্ণয় করে তার সঠিক অবস্থান জানা সম্ভব হচ্ছে। একে Global Positioning System বা সংক্ষেপে GPS বলা হয়।

Leave a Comment