ভিয়েনা সম্মেলনের ত্রুটিগুলি আলোচনা করো |
ভূমিকা:
ভিয়েনা সম্মেলন হল পৃথিবীর প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এই সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত এবং নানা ত্রুটি যুক্ত। ভিয়েনা সম্মেলনের প্রাক্কালে ন্যায় ও সততার দ্বারা ইউরোপের সমাজব্যবস্থার পুনর্গঠন এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্জাগরণ ঘটানোর কথা বলে বিভিন্ন আদর্শ প্রচার করা হয়। বাস্তবে তা মোটেই পালন করা হয়নি। আসলে বিজয়ী শক্তিগুলির উদ্দেশ্য ছিল আদর্শের আড়ালে পরাজিত দেশগুলি গ্রাস করা।
ভিয়েনা সম্মেলনের ত্রুটিসমূহ:
① জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের প্রতি ঘৃণা :
ভিয়েনা সম্মেলনের নেতৃবর্গের প্রধান দুর্বলতা ছিল পুরোনো রাজবংশগুলির প্রতি অন্ধ আনুগত্য এবং ফরাসি বিপ্লবজাত নতুন ভাবধারার তীব্র বিরোধিতা করা। ন্যায্য অধিকার নীতি প্রয়োগ করে পুরোনো রাজবংশগুলিকে নিজ নিজ স্থানে ফিরিয়ে আনা হয়। জাতীয়তাবাদের দাবিকে অগ্রাহ্য করে উত্তর ইটালিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অস্ট্রিয়ার আধিপত্য স্থাপন করা হয়। মেটারনিক বলেন যে, এখন থেকে ইটালির নাম শুধু ভূগোল বইয়ে থাকবে। তাই ঐতিহাসিকদের মতে, জাতীয়তাবাদকে উপেক্ষা করার ফলেই ভিয়েনা চুক্তি স্থায়ী হয়নি।
② ছোটো রাষ্ট্রগুলির স্বার্থ উপেক্ষিত:
ভিয়েনা সম্মেলনের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ হল ছোটো রাষ্ট্রগুলির স্বার্থ ও ইচ্ছা-অনিচ্ছা উপেক্ষা করা। ন্যায্য অধিকার ও শক্তিসাম্য নীতির অজুহাতে বড়ো রাষ্ট্রগুলি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করেছিল। ন্যায্য অধিকার নীতি সবসময়ে সমানভাবে অনুসরণ করা হয়নি। জেনোয়া ও ভেনিসের প্রজাতান্ত্রিক সরকারের পুনর্বাসন ঘটেনি। স্যাক্সনি, নরওয়ে, বেলজিয়াম প্রভৃতি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এই নীতি প্রয়োগ করা হয়নি। বেলজিয়ামকে হল্যান্ডের সঙ্গে জোর করে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। এই সম্মেলনে শক্তিসাম্য নীতিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং অস্ট্রিয়ার শক্তিবৃদ্ধি করা হয়।
উপসংহার:
এইসব ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও ভিয়েনা সম্মেলনের কিছু ইতিবাচক দিকও ছিল। যার ফলে ইউরোপে অনেক দিন শান্তি বজায় ছিল।