ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ ও বিতর্ক |
ভূমিকা
ভারত বহু ভাষাভাষী মানুষের দেশ। কিন্তু ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পরে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল প্রথম দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্ত করার কাজে সর্বাধিক সচেষ্ট হন। এর ফলে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামো সুদৃঢ় হয়, কিন্তু অচিরেই আর-এক সমস্যার সৃষ্টি হয়- তা হল ভাষার সমস্যা। এই সমস্যাসমাধানের জন্য ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের ভাবনাচিন্তাও শুরু হয়।
ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের পটভূমি
ভারত স্বাধীন হওয়ার অনেক আগে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল।
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশন এবং ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
৫১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে নেহরু কমিটির রিপোর্টে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যগুলিকে ভাগ করার কথা অনুমোদিত হয়।
দর কমিশন
ভারতে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন কতখানি কাম্য তা অনুসন্ধানের জন্য ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গণপরিষদ একটি ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন নিয়োগ করে। এই কমিশনের নেতৃত্ব দেন বিচারপতি এস কে দর (SK Dar)। তাই একে দর কমিশন বলা হয়।
দর কমিশনের রিপোর্ট
অনেক অনুসন্ধানের পর দর কমিশন ১০ ডিসেম্বর তার রিপোর্ট পেশ করে। এতে বলা হয়–
[1] ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠন করা হলে জাতীয় ঐক্য নষ্ট হতে পারে।
[2] প্রশাসনিক দিক থেকেও তা হবে অসুবিধাজনক।
[3] এমনকি প্রাদেশিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
গণপরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ
দর কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে গণপরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় যে, সংবিধানে রাজ্য পুনর্গঠনের ভাষাগত সূত্র রাখা হবে না।
পরবর্তী পরিস্থিতি
কিন্তু এতে বিরোধের মীমাংসা হয় না। দক্ষিণ ভারতে ভাষাভিত্তিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি পট্টভি সীতারামাইয়া বিচারপতি এস কে দরের রিপোর্টে সন্তুষ্ট ছিলেন না।
জেভিপি (JVP) কমিটি
দর কমিশনের রিপোর্ট পেশের ৮ দিন পর জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়। একে জে ভিপি (JVP) কমিটি বলে।
১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে জে ভি পি কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
জে ভিপি কমিটির রিপোর্টেও ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের বিরোধিতা করা হয়। তবে বলা হয়, যেখানে জনগণের প্রবল চাপ থাকবে সেখানে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন করা যেতে পারে।