ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণির অংশগ্রহণ কীরূপ ছিল

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণির অংশগ্রহণ কীরূপ ছিল
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণির অংশগ্রহণ কীরূপ ছিল?

ভূমিকা

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল সর্বভারতীয় শেষ গণ অভ্যুত্থান। ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতা, জাপানি আক্রমণের আশঙ্কা, কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি প্রভৃতি কারণে অসন্তুষ্ট ভারতবাসী ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পথে অগ্রসর হয়। কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই আন্দোলনের সামাজিক ভিত্তি আরও সুদৃঢ় করে তোলে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষকশ্রেণির ভূমিকা

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ভারতীয় কৃষকশ্রেণি। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের খেতমজুর, বর্গাচাষি, ভূমিহীন কৃষক এই আন্দোলনে যোগ দেয়।

[1] বাংলায় তমলুক, পটাসপুর, সুতাহাটা, ভগবানগোলা প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা খাজনা বন্ধের মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করে। 

[2] উড়িষ্যার তালচেরে সংরক্ষিত অরণ্যে বলপূর্বক প্রবেশ করে কৃষকশ্রেণি ‘চাষি মল্লারাজ’ নামক স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে।

[3] বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে এবং গুজরাটের সুরাট, খান্দেশ, ব্রোচ প্রভৃতি অঞ্চলে কৃষক আন্দোলন প্রায় গেরিলা যুদ্ধের আকার নিয়েছিল।

শ্রমিকশ্রেণির ভূমিকা

কমিউনিস্ট পার্টি ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে বিশেষ গুরুত্ব না দিলেও শ্রমিকশ্রেণির একটি বড়ো অংশ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল।

1] জামশেদপুরের টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানির (TISCO) শ্রমিকরা টানা ১৩ দিন ধর্মঘট করে।

[2] বোম্বাই, দিল্লি, লখনউ, কানপুর, আহমেদাবাদ, মাদ্রাজ, ব্যাঙ্গালোর প্রভৃতি শহরাঞ্চলে কলকারখানার শ্রমিকরা লাগাতার ধর্মঘট-হরতালে শামিল হয়।

[3] কলকাতা, হাওড়া অঞ্চলের ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, বাংলার ট্রাম কোম্পানি এবং উত্তর বাংলার চা-বাগানের শ্রমিকরাও এই আন্দোলনে অংশ নেয়।

উপসংহার

অতএব এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ভারতের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় রূপ দান করেছিল।

Leave a Comment