ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। |
ভূমিকা
ভারতের জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসে গান্ধিজি পরিচালিত শেষ সর্বভারতীয় আন্দোলন ছিল ভারত ছাড়ো আন্দোলন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে এই আন্দোলন সংঘটিত হওয়ায় এটি আগস্ট আন্দোলন নামেও পরিচিত। গান্ধিজির ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমগ্র ভারতবাসী এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
[1] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস-কে ভারতীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতে পাঠায়। কংগ্রেস সেক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করলেও ক্রিপস তাঁর প্রস্তাবে ভারতকে ‘স্বায়ত্তশাসন’ দেওয়ার কথা বলেন।
[2] ফলে ক্রিপস প্রস্তাব ব্যর্থ হয় ও মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে কংগ্রেস কার্যনির্বাহক সমিতি ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই ভারত ছাড়ো বা আগস্ট আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করে।
আন্দোলনের বিস্তার
[1] ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গোটা দেশ জুড়ে দেখা দেয় হরতাল, বিক্ষোভ মিছিল। প্রথমে বোম্বাই, আহমেদাবাদ, পুনা, কলকাতা, ঢাকা প্রভৃতি বড়ো বড়ো শহরগুলিতে আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও কয়েকদিনের মধ্যে ভারতবর্ষের গ্রামাঞ্চলেও এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল।
[2] বিহার, যুক্তপ্রদেশ, গুজরাট, আসাম প্রভৃতি প্রদেশে কৃষকরা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এই সময় জমিদারদের বিরোধিতা নয়, সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ অপশাসনের বিরোধিতাই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য।
নেতৃবৃন্দের গ্রেফতার
‘ভারত ছাড়ো’ প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর ৮ আগস্ট মধ্যরাতে গান্ধিজি, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, জহওরলাল নেহরু-সহ অন্যান্য কংগ্রেসি শীর্ষ নেতাদের পুলিশ গ্রেফতার করে। জাতীয় কংগ্রেসকে ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করা হয়।
ব্যর্থতা
ভারত ছাড়ো আন্দোলন বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হয়–
[2] সরকারি দমননীতি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগও এই আন্দোলনের প্রচণ্ড ক্ষতি করে।
[3] নেতৃত্ব ও সংগঠনের অভাব ছিল ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।
গুরুত্ব
ভারত ছাড়ো আন্দোলন ব্যর্থ হলেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
[1] এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর বহুদিনের চাপা অসন্তোষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশিত হয়।
[2] জাতীয় আন্দোলনের অন্যান্য পর্যায়ে শ্রমিক-কৃষকরা শামিল হলেও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তারা যেভাবে এগিয়ে এসেছিল তাতে আন্দোলনের গণচরিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।