ভারতে শ্রমিক আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা আলোচনা করো। |
ভূমিকা
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সংস্থা অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (AITUC) প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে বিভিন্ন শিল্পের বিভিন্ন আঞ্চলিক শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠেছিল। তবে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর শ্রমিক আন্দোলনে গতির সঞ্চার হয়।
কমিউনিস্ট পার্টি
১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতীয় বিপ্লবীরা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের অনেকে ভারতে এসে লাহোর, বোম্বাই, মাদ্রাজ, কলকাতায় কমিউনিস্ট গোষ্ঠী গড়ে তোলেন। তারা ‘মে দিবস’ পালন করেন। এই ঘটনার মধ্যে ব্রিটিশ সরকার ‘বলশেভিক সংকেত’ দেখতে পায়। এজন্য সরকার বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করে কমিউনিস্টদের জড়িয়ে দেয়।
শ্রমিক সংগঠন
১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে মুজফ্ফর আহমেদ ও অন্যান্যরা ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ‘লাঙল’ ও ‘গণবাণী’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি-র শাখা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে (১৯২৭ খ্রি.)। কমিউনিস্টদের চেষ্টায় বোম্বাই-এ গিরনি-কামগড় ইউনিয়ন গড়ে ওঠে (১৯২৮ খ্রি.)। এভাবে কমিউনিস্টরা বিভিন্ন শিল্পের শ্রমিকদের সংগঠিত করতে থাকে।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা
ব্রিটিশ সরকার ৩৩জন কমিউনিস্ট ও শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করে। অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন মুজফ্ফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, এস এস মিরাজকর প্রমুখ। এর ফলে AITUC থেকে বামপন্থী নেতারা বিচ্ছিন্ন হয়ে রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (RTUC) গঠন করে। এর ফলে শ্রমিক আন্দোলন একটু দুর্বল হয়ে পড়ে।
আইন অমান্য আন্দোলন
আইন অমান্য করে গান্ধিজি গ্রেফতার হলে (৬ মে) শ্রমিকেরা তার প্রতিবাদ জানায়। মহারাষ্ট্রের শোলাপুরের বস্ত্রশিল্প শ্রমিকেরা ধর্মঘট শুরু করে (৭ মে)। শোলাপুরে সরকারি প্রশাসন লোপ পায়। সেখানে সমান্তরাল প্রশাসন গড়ে ওঠে। স্থানীয় মানুষ ধর্মঘটি শ্রমিকের পাশে এসে দাঁড়ায়। বোম্বাই শিল্পাঞ্চলে গিরনি-কামগড় ইউনিয়ন লাগাতার ধর্মঘট করে। বোম্বাই-এ জি আই পি রেলওয়ে মেনস ইউনিয়ন লাল পতাকা লাগিয়ে রেল পরিবহণ বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সেনা তলব করে।
CSP প্রতিষ্ঠা
কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি-তে (CSP) কমিউনিস্টরা আশ্রয় নেয়। আবার শ্রমিক আন্দোলনে গতি আসে। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ৯৪৬টি এবং ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ১৫৯টি ধর্মঘট হয়। ২,০০,০০০-এর বেশি শ্রমিক তাতে অংশ নেয়।
মূল্যায়ন
এভাবে কমিউনিস্টরা শ্রমিকশ্রেণিকে ঐক্যবদ্ধ করে সংগ্রামের হাতিয়ারে পরিণত করে। ব্রিটিশ সরকারকে আতঙ্কিত করে তাদের দাবিদাওয়া আদায়ে সক্ষম হয়।