বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলন
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন বা স্বদেশি আন্দোলন হয়। এই বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে কৃষকশ্রেণি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনি। কারণ- আন্দোলনে কৃষিভিত্তিক কর্মসূচি ছিল না। ② পূর্ববঙ্গের মুসলমান কৃষকরা বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন করে।
অসহযোগ আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলন
১৯২০-২২ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন পরিচালিত হয়। এই আন্দোলনে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল।
[1] বাংলায় আন্দোলন: বাংলার মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, জলপাইগুড়ি, দিনাজপুর, পাবনা, রংপুর প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
[2] বিহারে আন্দোলন: বিহারের ভাগলপুর, মুজফ্ফরপুর, দ্বারভাঙ্গা, মধুবনি প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা অসহযোগ আন্দোলনের সময় খাজনা বন্ধ আন্দোলনে শামিল হয়। বিহারে কৃষক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন স্বামী বিদ্যানন্দ।
[3] যুক্তপ্রদেশে আন্দোলন: যুক্তপ্রদেশের হরদই, বারাবাঁকি, রায়বেরিলি, প্রতাপগড় প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা আন্দোলনে শামিল হয়। একা আন্দোলনে কৃষকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়াও গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব অঞ্চলেও কৃষকরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
আইন অমান্য আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলন
১৯৩০-৩৪ খ্রিস্টাব্দে পরিচালিত আইন অমান্য আন্দোলনের সময় কৃষকশ্রেণি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন মহাত্মা গান্ধি।
[1] বাংলায় আন্দোলন: বাংলার মেদিনীপুরের কাঁথি, মহিষাদল প্রভৃতি অঞ্চলে কৃষকরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
[2] যুক্তপ্রদেশে আন্দোলন: যুক্তপ্রদেশের রায়বেরিলি, আগ্রা, লখনউ, [ বারাবাঁকি, প্রতাপগড় প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপক।
[3] বিহারে আন্দোলন: আইন অমান্য আন্দোলনের সময় বিহারের [ কৃষকরা জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের দাবি করে। স্বামী সহজানন্দের নেতৃত্বে কিষানসভা গঠিত হয়।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলন
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল এক স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন। এই আন্দোলনেও কৃষকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
[1] বাংলায় আন্দোলন: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় মেদিনীপুর, দিনাজপুর, বালুরঘাট প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা খাজনা বন্ধ আন্দোলনে শামিল হয়।
[2] বিহারে আন্দোলন: বিহারের ভাগলপুর, মুজফ্ফরপুর, পূর্ণিয়া, সাঁওতাল পরগনা প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। এখানের ৮০ শতাংশ থানা আন্দোলনকারীদের দখলে চলে আসে।
[3] গুজরাটে আন্দোলন: গুজরাটের সুরাট, খান্দেশ, ব্রোচ প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা রেল অবরোধ ও সরকারি দপ্তর আক্রমণ করে।
[4] উড়িষ্যায় আন্দোলন : উড়িষ্যার তালচের অঞ্চলের কৃষকরা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।