বিনায়ক দামোদর সাভারকর কেন ইতিহাসে বিখ্যাত
|
ভূমিকা
বিশ শতকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে সশস্ত্র বৈপ্লবিক কার্যকলাপ প্রবলভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। মহারাষ্ট্রও ছিল এসময় সশস্ত্র বিপ্লববাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রস্থল। বিনায়ক দামোদর সাভারকর ছিলেন মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ- মহারাষ্ট্রে বিপ্লববাদ প্রসারে তাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য।
বিনায়ক দামোদর সাভারকরের ভূমিকা
ভারতে বিশেষত মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে বিনায়ক দামোদর সাভারকরের ভূমিকা ছিল সর্বজনবিদিত।
অভিনব ভারত প্রতিষ্ঠা
বিনায়ক দামোদর সাভারকর বাল্যকাল থেকে বৈপ্লবিক ভাবাদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিলেন। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে মহারাষ্ট্রে ‘মিত্রমেলা’ গড়ে তোলেন। সশস্ত্র বৈপ্লবিক কার্যাবলির প্রস্তুতির পাশাপাশি এই সমিতির যুবকদের উপযুক্ত সামরিক প্রশিক্ষণও দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। ইটালির জনপ্রিয় নেতা ম্যাৎসিনির ‘ইয়ং ইতালি’ নামক সংগঠনের অনুকরণে গঠিত ‘মিত্রমেলা’-র নাম ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে বদলে অভিনব ভারত রাখা হয়।
লন্ডনে সশস্ত্র বৈপ্লবিক কার্যকলাপ
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে সাভারকর লন্ডনে গিয়ে বিপ্লববাদী কার্যকলাপের সঙ্গে আরও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। লন্ডনে অবস্থিত ইন্ডিয়া হাউসের কাজকর্মের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হন এবং এখান থেকে নিয়মিত ভারতীয় বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। ভারতীয় বিপ্লবীদের সাহায্যার্থে বোমা তৈরির কলাকৌশল, অস্ত্রসামগ্রী এবং বিপ্লবী সাহিত্য সাভারকর ভারতে পাঠাতেন যা ভারতে বিপ্লবী আন্দোলন পরিচালনায় বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল।
জ্যাকসনকে হত্যার পরিকল্পনা
বিপ্লবী সাভারকরের সক্রিয় উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় তাঁর অনুগামী ভারতীয় বিপ্লবীরা নাসিকের অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট জ্যাকসনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বিনায়ক দামোদর সাভারকরের প্রেরিত অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেই অভিনব ভারতের বিপ্লবীরা জ্যাকসনকে হত্যা করে। মহারাষ্ট্রের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে এটি এক স্মরণীয় অধ্যায়।
নাসিক ষড়যন্ত্র মামলা
জ্যাকসন হত্যার সঙ্গে সাভারকরের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ আছে বলে সন্দেহ করে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে এবং শুরু হয় নাসিক ষড়যন্ত্র মামলা (১৯১০ খ্রি.)। মামলার রায় অনুযায়ী বিনায়ক দামোদর সাভারকরকে ২৬ বছরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
উপসংহার
১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দামোদর সাভারকরের কারামুক্তি ঘটে ও এরপর তিনি হিন্দু মহাসভা-র সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ বিনায়ক দামোদর সাভারকরের জীবনাবসান হয়। মহারাষ্ট্র তথা সমগ্র ভারতবর্ষে সশস্ত্র বৈপ্লবিক কার্যকলাপে তাঁর অবদানের জন্য তিনি ইতিহাসে ‘বীর সাভারকর’ নামে পরিচিত হয়ে আছেন।