বিংশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো। |
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের সময় শ্রমিক আন্দোলন
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন পরিচালিত হয়। এই আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
[1] শ্রমিকরা স্বদেশি দ্রব্য উৎপাদনে তৎপর হয়ে ওঠে। অপরদিকে বয়কট আন্দোলনেও শামিল হয় তারা।
[2] রাঁধুনিরা রান্নায় বিদেশি দ্রব্য ব্যবহার করতে অস্বীকার করে, মুচিরা বিদেশি জুতো সারাতে, ধোপারা বিদেশি কাপড় কাচতে অস্বীকার করে।
[3] কলকাতা ও খিদিরপুরের বন্দর শ্রমিকরা, রেল শ্রমিকরা, ছাপাখানার কর্মীরা ধর্মঘটে শামিল হয়।
[4] তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনের বস্ত্র শ্রমিকরা, বিহার ও রাওয়ালপিন্ডির রেল শ্রমিকরা ধর্মঘট করে।
অসহযোগ আন্দোলনের সময় শ্রমিক আন্দোলন
১৯২০-২২ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন পরিচালিত হয়। এই আন্দোলনে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
[1] অসহযোগ আন্দোলনের সময় ১৯২০-২১ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় ১৩৭টি শ্রমিক ধর্মঘট হয়। এতে প্রায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার শ্রমিক অংশগ্রহণ করে। হাওড়ার জুটমিল শ্রমিকরা, রানিগঞ্জ, ঝরিয়ার কয়লাখনির শ্রমিকরা, কলকাতার বন্দর শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট করে।
[2] আসামের চা শ্রমিকরা, মাদ্রাজের বস্ত্র শ্রমিকরা এবং কর্ণাটকের বস্ত্র শ্রমিকরা ধর্মঘটে শামিল হয়।
আইন অমান্য আন্দোলনের সময় শ্রমিক আন্দোলন
১৯৩০-৩৪ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন মহাত্মা গান্ধি।
[1] মহারাষ্ট্রের শোলাপুর ও বোম্বাই-এর শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। বোম্বাইয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০ হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে শামিল হয়।
[2] কলকাতার পরিবহণ শ্রমিক, হাওড়ার কুলি ও বালির পাটকল শ্রমিকরা ধর্মঘট করে।
[3] মাদ্রাজ বিহার ও করাচিতেও শ্রমিকরা ধর্মঘটে শামিল হয়।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় শ্রমিক আন্দোলন
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল একটি স্বতঃস্ফূর্ত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিকদের আন্দোলন থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক শ্রমিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে শামিল হয়।
[1] বোম্বাই শহরে ৯-১৪ আগস্ট ব্যাপক গণবিক্ষোভ ঘটে।
[2] গুজরাটের আহমেদাবাদের প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক ধর্মঘটে শামিল হয়।
[3] বিহারের জামসেদপুর-সহ দিল্লি, লখনউ, কানপুর, নাগপুর, কলকাতার শ্রমিকরাও ধর্মঘট করে।