বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা করো |
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের জাতীয়তাবাদী ও শ্রমিকশ্রেণির নেতারাও এই সাম্যবাদী আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয়। বিংশ শতকের ভারতে বামপন্থী গোষ্ঠীর উদ্ভব ও উপনিবেশবিরোধী বামপন্থী আন্দোলন লক্ষ করা যায়।
বামপন্থী দল প্রতিষ্ঠা
[1] রাশিয়ার তাসখন্দে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর মানবেন্দ্রনাথ রায় ২৪ জন প্রবাসী ভারতীয়দের নিয়ে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন।
[2] ভারতের কানপুরে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এস বি ঘাটে।
উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা
বিস্তার: রাশিয়ার কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রভাবে ভারতে বামপন্থী আন্দোলনের প্রসার ঘটে। কলকাতায় মুজফ্ফর আহমেদ, বোম্বাই-এ এস এ ডাঙ্গে, মাদ্রাজে সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ারের নেতৃত্বে বামপন্থী গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। তাঁরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা প্রকাশ করে বামপন্থী ভাবধারার প্রসার ঘটাতে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ধূমকেতু, ক্রান্তি, ইনকিলাব প্রভৃতি।
সরকারি দমননীতি : সরকার ভারতে বামপন্থী আন্দোলন ধ্বংস করার জন্য প্রথম থেকে দমননীতি গ্রহণ করে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট নেতাদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করে। এই সময় ভারতের প্রথম কমিউনিস্টবিরোধী মামলা বা ‘পেশোয়ার । ষড়যন্ত্র মামলা’ শুরু হয়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে মুজফ্ফর আহমেদ-কে গ্রেফতার করে তাঁর বিরুদ্ধে কানপুর যড়যন্ত্র মামলা শুরু হয়। এই মামলায় জড়িয়ে বামপন্থী নেতা এস এ ডাঙ্গে, নলিনী গুপ্তকে-ও জেলে পাঠানো হয়।
‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’ প্রতিষ্ঠা: কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করার জন্য কাজী নজরুল ইসলাম, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, হেমন্ত কুমার সরকার ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর কলকাতায় দ্য লেবার স্বরাজ পার্টি অফ দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এই দলের নাম হয় ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা: শ্রমিক ধর্মঘটে ও বামপন্থীদের কার্যকলাপে আতঙ্কিত হয়ে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার শিল্পবিরোধ বিল ও জননিরাপত্তা বিল উত্থাপন করে। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ৩৩ জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেফতার করে শুরু হয় মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা। এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন- মুজফ্ফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, ধরণী গোস্বামী প্রমুখ।
কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধকরণ: ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্ট পার্টি-কে পুনরায় সুসংহত করার প্রয়াস বন্ধ করার জন্য কমিউনিস্ট পার্টি ও তার শাখা সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে।
পরবর্তী কার্যকলাপ : নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও কমিউনিস্ট পার্টি তার প্রভাব বৃদ্ধি করতে থাকে। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে শ্রমিক দলের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন ও শ্রমিক আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে।
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির রাশিয়া আক্রমণকালে কমিউনিস্ট পার্টি ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন করে। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কমিউনিস্ট পার্টি নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিল। যুদ্ধকালীন সময় ও তার পরবর্তী সময়ে কমিউনিস্ট পার্টি তার অভাবনীয় প্রভাব বৃদ্ধি করে।
উপসংহার
বিশ শতকের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তবে জাতীয় কংগ্রেসের ব্যাপক প্রভাবের ফলে কমিউনিস্টদের প্রভাব ততটা প্রতিভাত হয়নি।