বাংলার বিজ্ঞানশিক্ষার বিকাশে শ্রীরামপুর মিশনারিদের অবদান আলোচনা করো। |
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়ম কেরি শ্রীরামপুরে পদার্পণ করলে উইলিয়ম ওয়ার্ড ও মার্শম্যানের সহায়তায় শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনের জয়যাত্রা শুরু হয়। বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে মিশনারিদের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
রক্সবার্গের অবদান
শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিদর্শক রক্সবার্গ বাংলায় ৩৫০০টি গাছের তালিকা তৈরি করেন। উইলিয়ম কেরি এটির সম্পাদনা করেন এবং নাম দেন ‘হার্টস বেঙ্গলেনসিস’।
উইলিয়ম কেরির ভূমিকা
রক্সবার্গের পরবর্তী পরিদর্শক ওয়াকিলের ‘এশীয় উদ্ভিদের সংকলন’ গ্রন্থটিরও সম্পাদনা করেন উইলিয়ম কেরি। ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে এই উদ্দেশ্যে কৃষি-উদ্যানপালন সমিতি (Agri-Horticulture Society) স্থাপন করেন তিনি।
উইলিয়ম কেরি একটি কাঠের মুদ্রণযন্ত্র তৈরি করেছিলেন। পঞ্চানন কর্মকার ও মনোহর কর্মকার তাঁকে এ কাজে সাহায্য করেছিলেন। শ্রীরামপুর কলেজে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীবনবিজ্ঞান, ভূবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে পড়ানো শুরু হয় এবং এই মুদ্রণযন্ত্রে নানা গ্রন্থও ছাপা হয়।
ফেলিক্স কেরির ভূমিকা
উইলিয়ম কেরির পর মুদ্রণের ক্ষেত্রে অগ্রসর হন তাঁর পুত্র ফেলিক্স কেরি। তিনি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক কিছু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার পঞ্চম সংস্করণ অবলম্বন করে ফেলিক্স কেরি তাঁর বিদ্যাহারবলী বাণী রচনার সূত্রপাত করেন। চিকিৎসাবিদ্যা ও অস্ত্রোপচার বিষয়ে ফেলিক্সের যথেষ্ট আগ্রহ ও দক্ষতা ছিল। সেইজন্য অ্যানাটমি বা ব্যবচ্ছেদবিদ্যা দিয়েই তিনি প্রথম এনসাইক্লোপিডিয়া অনুবাদ শুরু করেন।
জন ম্যাকের ভূমিকা
জন ম্যাক ছিলেন শ্রীরামপুর মিশনের বিজ্ঞানচর্চার প্রধান ব্যক্তিত্ব। মিশনের কলেজের বিজ্ঞানের অধ্যাপক জন ম্যাক বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি গবেষণাগারও গড়ে তোলেন। এটিই হল ভারতে প্রথম উন্নতমানের বিজ্ঞানের গবেষণাগার।
রসায়নের উপর ম্যাক বাংলা ভাষায় গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর ‘রসায়নবিদ্যার সূত্রাবলী’ ছিল রসায়নবিদ্যার উপর লিখিত বিখ্যাত বাংলা গ্রন্থ।
তাই শ্রীরামপুর মিশনের বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে উইলিয়ম কেরি ও তাঁর পুত্র ফেলিক্স কেরি এবং জন ম্যাকের অবদান ছিল অবিস্মরণীয়।